ভ্যান্স ইসরায়েলপন্থী ও চীনবিরোধী; তাঁকে ঘিরে ইউরোপে উদ্বেগ

রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত প্রার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পছন্দের ব্যক্তি জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে করতালি দিচ্ছেন। রিপাবলিকান জাতীয় কনভেশনে। ফিসার্ভ ফোরাম, মিলওয়াকি। ফটোঃ ১৫ জুলাই, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি ঘোষিত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জে ডি ভ্যান্স বুধবার রাতে রিপাবলিকান জাতীয় কনভেনশনে মূল ভাষণে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন । তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে “আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করো” (“মেক আমেরিকা স্ট্রং আগেইন”) স্লোগান বা থিমের দিকেই আলোকপাত করেছেন।

ভ্যান্স তার ভাষণে চীনের হুমকি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ও গাজার যুদ্ধ নিয়ে তিনি কোনও বাক্য ব্যয় করেননি। তবে, তথাকথিত রেগানবাদী রিপাবলিকান যারা আমেরিকার হস্তক্ষেপবাদের সমর্থক ও ইউক্রেন সম্পর্কে যাদের মতামতের সঙ্গে তার অবস্থানের বিরোধ রয়েছে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এমন একটি দল দরকার যে বিভিন্ন মতামত নিয়ে বিতর্কে ভয় পায় না।”

৩৯ বছর বয়সী প্রাক্তন এই পুঁজিবাদী উদ্যোগপতি সরকারি দফতরে দুই বছরেরও কম সময় অতিবাহিত করেছেন এবং পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা কম। তার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলি প্রধানত ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মতাদর্শের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে তার যে ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, সংক্ষেপে তা হল, তিনি ইসরায়েলপন্থী ও চীনবিরোধী। তাকে ঘিরে ইউরোপে উদ্বেগ দানা বেঁধেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মেরিন ভ্যান্স ইরাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশে আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি সংশয়ী এবং ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে ত্রাণ-সহায়তা পাঠানোর ব্যাপক বিরোধী। তার যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র একযোগে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যকে সাহায্য করতে এবং পূর্ব এশিয়ায় দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে পারে না।

ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “এর কোনও অর্থ হয় না। অস্ত্র তৈরির নিরিখে এই অঙ্ক খাটে না।”

কুইন্সি ইন্সটিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্র্যাফটে সম্প্রতি এক ভাষণে ভ্যান্স তার পররাষ্ট্র নীত সংক্রান্ত লক্ষ্য স্পষ্ট করেছেন।

তিনি বলেছেন, “আমরা চাই ইসরায়েলি ও সুন্নিরা বিশ্বে তাদের নিজস্ব অঞ্চলকে রক্ষা করুক। ইউরোপীয়রা বিশ্বে তাদের নিজস্ব অঞ্চলকে রক্ষা করুক। পূর্ব এশিয়ার দিকে আমরা আরও বেশি মনোযোগ দিতে চাই।”

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চীনের দিকে মনোযোগ দেওয়া নিয়ে ভ্যান্সের এই লক্ষ্য নতুন নয়, আবার রিপাবলিকান হিসেবে তার এই ভাবনা ব্যতিক্রমীও নয়। বস্তুত, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালে ‘পিভট টু এশিয়া’ (এশিয়াকে অগ্রাধিকার) মতাদর্শ অনুসরণ করেছিলেন।

সেই অগ্রাধিকার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং এ নিয়ে আজও প্রশ্নচিহ্ন রয়ে গেছে কারণ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিয়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।