অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে, জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পলক

ঢাকার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ১৮ জুলাই, ২০২৪।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সংযোগ স্বাভাবিক করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পলক বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের নানা গুজব আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধের জন্য আগে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি বুঝে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত কনটেন্ট অপসারণ নিয়ে তাদের প্রাইভেসি পলিসি সন্তোষজনক নয়।”

পলক বলেন, “তাদের কারণে যদি একটি প্রাণহানিও ঘটে তাহলে এসব কোম্পানিকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বাংলাদেশে ডেটা সেন্টার স্থাপন করে বাংলাদেশের আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।”

উল্লেখ্য, বুধবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। রাত থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে। মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারছেন না মানুষ।

কমপ্লিট শাটডাউন: অচল রাজধানী ঢাকা, বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ঢাকার বাড্ডা, মেরুল, উত্তরা, ধানমন্ডি, মতিঝিল ও আরামবাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষকালে পুলিশকে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে।

পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি উপেক্ষা করে বাড্ডা ও এর আশপাশের এলাকায় রাস্তায় নেমে আসে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও এর কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা।

উত্তরায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আবাসিক এলাকাগুলোর অলি-গলিতে ছড়িয়ে যেতে থাকে। অলি-গলিতে সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা।

শাটডাউনের সকালে রাজধানীর চিরচেনা যান চলাচল ছিল না। প্রায় ফাঁকা রাস্তায় কয়েকটি বিআরটিসির দ্বিতল বাস চলতে দেখা যায়। গণপরিবহনের অনুপস্থিতিতে রাজপথ ছিল রিকশার দখলে। কোনো গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভাষণে কোটা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায় না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। রায় নিয়ে তারা হতাশ হবে না বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া, আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরপরই শাটডাউনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা।

মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল বন্ধ

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দুপুরে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে মতিঝিল থেকে আগারগাঁও এবং মিরপুর ১১ থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

মেট্রোরেলের পরিচালক (অপারেশন) মো. নাসির উদ্দিন জানান, দুপুরে গোলচত্বরে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দিলে পরিস্থিতি বিবেচনায় দুপুর ২টায় আঁগারগাঁও–মিরপুর ১০ অংশে মেট্রো চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাকিলয়া নতুন ব্রিজ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা আন্দোলনকারীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচলকারী সব যানবাহন। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তারপর কয়েকজনকে আটক করে।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

কমপ্লিট শাটডাউনে সিলেটে যান চলাচল কম

কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের মতো সিলেটেও পালিত হয়েছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। এ সময় শহরের কিছু কিছু দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশই বন্ধ দেখা গেছে।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে সিলেটের বিভিন্ন রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। সকালে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, “চালকদের গাড়ি না চালাতে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে অনেকেই গাড়ি নিয়ে নামায় সিলেটে গণপরিবহন চলাচল কিছুটা কম। দূরপাল্লার ও আঞ্চলিক সড়কে কিছু যানবাহন চলাচল করছে।”

সিলেট মহানগরী পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”