বুধবার রাতে উইসকনসিন রাজ্যের মিলাওয়াকিতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেডি ভ্যান্স আনুষ্ঠানিক ভাবে সবিনয়ে এই মনোয়ন গ্রহণ করেন। ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত এই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিজের পরিচিতি তুলে ধরার সময়ে কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর বড় হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণনা করেন এবং বলেন যে তাঁর দল খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারে নানান প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি আমেরিকানদের চ্যালেঞ্জের কথা।
৩৯ বছর বয়সী এই সেনেটর ভ্যান্স নিজের পরিচয় তুলে ধরার আগে, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে শনিবার যে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল , সে প্রসঙ্গে বলেন তবু ট্রাম্প ভেঙ্গে পড়েননি বরঞ্চ উঠে দাঁড়িয়ে সেই অবস্থায় বলেছিলেন , “ ফাইট, ফাইট, ফাইট”। ভ্যান্স বলেন, “ গত আট বছর ধরে তাঁর দেশের জন্য লড়াই করতে ট্রাম্প সব কিছুই দিয়েছেন। তাঁর রাজনীতির প্রয়োজন নেই, বরঞ্চ তাঁকে দেশের প্রয়োজন।
ট্রাম্প সম্পর্কে ভ্যান্স বলেন , “ তারা বলেন তিনি নাকি স্বৈরশাসক ছিলেন । তারা বলেন, তাঁকে যে কোন মূল্যে থামাতে হবে। কিন্তু তিনি প্রকৃত পক্ষে কিসের আহ্বান জানিয়েছিলেন ? তিনি জাতীয় একতার আহ্বান জানিয়েছেন”।
ভ্যান্স নিজেকে প্রায় ভুলে যাওয়া শিল্প শহর ওহাইও’র ছেলে বলে তুলে ধরেন এবং বলেন নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি শ্রমজীবি মানুষের জন্য লড়াই করে যাবেন। তিনি তাঁর শৈশবের কঠিন দিনগুলো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিনে যোগদান, ইয়েলের ল’ স্কুলে অধ্যয়ন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে পৌঁছানোর কঠোর যাত্রার কথা উল্লেখ করে বলেন তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা বোঝেন।
জেডি ভ্যান্স বলেন, “ আমি ওহাইও’র একটি ছোট শহর মিডলটাউনে বড় হয়েছি যেখানে লোকজন খোলামেলা ভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতেন, নিজের হাতে সব কিছু নির্মাণ করতেন এবং তাদের ঈশ্বরকে, তাদের পরিবারকে, তাদের সমাজকে, তাদের দেশকে মন দিয়ে ভালবাসতেন। কিন্তু এটি এমন এক স্থান যেটিকে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং ওয়াশিংটনে আমেরিকার শাসক গোষ্ঠী তাদের ভুলেই গেছে”।
জেডি ভ্যান্স জো বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে পার্থক্যগুলি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ আমি যখন থেকে জন্মেছি জো বাইডেনকে ওয়াশিংটনের একজন রাজনীতিক হিসেবেই দেখছি । গত অর্ধ শতক ধরে তিনি এমন নীতির উদ্যোগ নিয়েছেন যার প্রতিটি আমেরিকাকে আরও দূর্বল, আরও দরিদ্র করেছে”।
ভ্যান্স বলেন, তার বিপরীতে ট্রাম্প চার বছরেই ওই সব নেতিবাচক ধারাকে পাল্টে দিতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “ ভেবে দেখুন তা হলে আমরা যদি তাঁকে আরও চার বছর দিই তিনি আরও কি করতে পারেন”। তখন দর্শকরা শ্লোগান দেন, “ চাই আরও চার বছর”।
তিনি অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারে বাইডেনের সমালোচনা করেন, কিন্তু ব্যাপকতর অর্থে অভিবাসন প্রসঙ্গে তিনি তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকদের কথা বলেন যারা দক্ষিণ এশিয়া থেকে অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন । ভ্যান্স বলেন, “তাঁরা অসাধারণ সব লোক যাঁরা নানা ভাবে এ দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমি হয়ত পক্ষপাতিত্ব করছি কারণ আমি আমার স্ত্রীকে ও তার পরিবারকে ভালোবাসি। কিন্ত কথাটাতো সত্যিই”।
তাঁর ভাষণে তিনি ট্রাম্পের মুল কিছু বিষয়কেই তুলে ধরেন যেমন চীনা পণ্য আমদানির বিপরীতে দেশি পণ্য তৈরির উপর অগ্রাধিকার এবং মিত্রদেরও সতর্ক করে দেন যে বিশ্ব শান্তি অর্জনের যাত্রা আর “ বিনা মূল্যে” হবে না।
ভ্যান্স ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য প্রদানের বিরোধীতা করেছেন এবং ২০২০ সালের বাইডেনের কাছে ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার ফলাফল পাল্টানোর ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন আমদানিতে বিধি নিষেধ জারি করে, নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধি করে এবং বড় বগড় কর্পোরেটকে নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের উচিত্ শ্রমজীবি মানুষকে সহায়তা দেয়া।
জেডি ভ্যান্স তাঁর ভাষণে তাঁর প্রয়াত নানির কথা উল্লেখ করেন যাঁর অভিভাবকত্বে তিনি বেড়ে ওঠেন। তিনি তাঁর মায়ের কথাও উল্লেখ করেন যিনি েএই ভাষণের সময়ে সেখানেই ছিলেন। স্বয়ং ডনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন।
জেডি ভ্যান্সের ভাষণের আগে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স। তাঁদের ভালোবাসা, জেডির সংগ্রামের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন ঊষা ভ্যান্স।