সিরিয়া-তুরস্ক : সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ঐ অঞ্চলের জন্য কী বয়ে আনতে পারে

ফাইল ফটোঃ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ (ডানে) ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে দামেস্কে স্বাগত জানান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা পুনরায় তাদের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তাদের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে।

এরদোয়ান বলেছেন, ২০১১ সালে ব্যাপক সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এবং সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংস দমন পীড়নের পরে দুদেশের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে প্রথমবারের মতো তিনি আসাদের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠকের আয়োজন করবেন বলে আশা করছেন।

ওয়াশিংটনে নেটো শীর্ষ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, তিনি দু’সপ্তাহ আগে আসাদকে তুরস্কে বা অন্য কোনও তৃতীয় আরেকটি দেশে বৈঠক করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন।

আসাদকে উৎখাতের চেষ্টাকারী সিরিয়ান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে তুরস্কের সমর্থন দিয়েছে, এবং এখনও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেনা উপস্থিতি দামেস্কের জন্য একটি বেদনাদায়ক বিষয়।

তবে ঐ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এবারে কী ঘটতে পারে:

ফাইল ফটোঃ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ২০২৩ সালের ১০ মে চার দেশের বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) ইরানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরআবদোল্লাহিয়ান, রাশিয়ার সারগে লাভরভ, সিরিয়ার ফাইসাল মেকদাদ এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেল্ভুত জাভুসলু।

তাদের শেষ আলোচনায় যা ঘটেছিল

আসাদ সরকারের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং রাশিয়া ঐ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দিচ্ছে।

মস্কোতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তুরস্ক, সিরিয়া এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠক করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে ২০১১ সালের পর এটাই ছিল প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। গত বছর রাশিয়া সিরিয়া ও তুরস্কের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের ব্যবস্থা করে।

তবে আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং সিরিয়ার কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতির তীব্র নিন্দা জানানো অব্যাহত রাখেন। গত আগস্ট মাসে স্কাই নিউজ আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাদ বলেন, এরদোয়ানের প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরিয়ায় তুরস্কের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া।

ফাইল ফটোঃ তুরস্কের রেহানলি থেকে সিরিয় শরণার্থী পরিবার নিজ দেশে ফিরে আসছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

এখন কী ভিন্ন

দৃশ্যত রাশিয়া আবারও আলোচনাকে উৎসাহিত করছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এবার ইরাক, যাদের তুরস্ক এবং সিরিয়া দুদেশের সঙ্গেই সীমান্ত আছে, তারা মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে, যেভাবে তারা এর আগে আঞ্চলিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিল।

সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল থিংক ট্যাংকের ফেলো অ্যারন লুন্ড বলেন, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে নামের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তুরস্কের চাপ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ইরাক হয়তো এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি ১৯৮০’র দশক থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে এবং উত্তর ইরাকে তাদের ঘাঁটি রয়েছে।

সিরিয়ার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করে বাগদাদ “হয়ত হয়তো তুর্কিদের সঙ্গে এক ধরণের ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করার এবং হস্তক্ষেপের হুমকি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে”, বললেন লুন্ড।

গাজার যুদ্ধ এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় ঐ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটেছে। তুরস্ক বিষয়ক বিশ্লেষক ও আঙ্কারায় জার্মান মার্শাল ফান্ডের পরিচালক উসগুর উনলুহিসারজিকলি বলেন, যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাবের মুখে উভয় দেশই হয়তো নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে এবং নতুন জোট খুঁজছে।

তুরস্ক ও সিরিয়া কী চায়

\উনলুহিসারজিকলি বলেন, তুরস্কে ক্রমবর্ধমান সিরিয়া বিরো ধী মনোভাবের কারণে এরদোয়ান হয়তো আলোচনা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করেছে। এরদোয়ান সম্ভবত এমন একটি চুক্তির আশা করছেন যার ফলে তার দেশে বসবাসরত ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার সিরিয়ান শরণার্থীর অনেকেরই সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর পথকে প্রশস্ত করতে পারে।

সিরিয়ার দিক থেকে, তুরস্কের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের অর্থই হচ্ছে ঐ অঞ্চলে এক দশকেরও বেশি সময় পরে আসাদের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা অবসানের আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। বিক্ষোভকারীদের উপর ২০১১ সালে আসাদ সরকারের নির্মম দমন এবং পরে কথিত যুদ্ধাপরাধের কারণে দীর্ঘকাল তাকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।

.উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতি নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও দামেস্ক ও আঙ্কারা উভয়েরই উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করার আগ্রহ রয়েছে।