বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছে

আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে, হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, “শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না। এছাড়া অ্যাম্বুল্যান্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না।”

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা সারা দেশের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহবান জানাচ্ছি।”

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, আমাদের রক্ষা করুন। এই লড়াই শুধু ছাত্রদের নয়, দলমত নির্বিশেষে দেশের সাধারণ মানুষের।”

আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে বলে জানায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

রাজধানীতে আহত অর্ধশতাধিক

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ চলাকালে বুধবার (১৭ জুলাই) রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে।

দিনভর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে। সকাল থেকে রাত ৮টার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে তারা আহত হন।

শনির আখড়া এলাকায় পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন; সোহাগ (২৭), ফয়সাল (২৮), মহিম আহমেদ পিয়াস (১৫), মনিরুল (২০), রোহিদ (২) ও বাবলু মিয়া (৪০)।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেছেন, তারা বর্তমানে জরুরি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে, আজিমপুর এলাকায় রিকশায় করে যাওয়ার সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম (৩২)। অন্য আহত ব্যক্তিরা হলেন; কাউসার (২০), ওলিউল্লাহ (২৭), নাঈম (২৪), সাইদুল (২৬), ইকবাল (৫০), সোহাগ (২৮), লিমন (১৫), মিজান (২০), ফেরদৌস (৪০), কবিতা (৪৫), নাসরিন (৪৮), রহিমা (৫০), বিজয় (২৪), রিপন (৩৯), দিল আফরোজ (৩০), আব্দুল হাদী (২১), মাসুদ (২১), তানজিল (২৭), জাকির (২২), জহিরুল (২৬), আসাদুজ্জামান (২৩), মেহেদী হাসান (২৫), জাওয়াদ (২০), মাসুদ (২৪), আব্দুল হান্নান (২৪), আফসানা জুঁই (২৩), তানজিলা (২২), শিহাব উদ্দিন (৩০), আসিফ (২২), তাহমিদ (২৫), ভৌমিক (২৯), সাকিব (২০) ও আরিফুল (৪২)।

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন’ পথচারী কাউসার (২০), শিক্ষার্থী অলিউল্লাহ (২৭), আশরাফ আলম (৩২), তানজিল (২৭) ও ফয়সাল (২৮)।

দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস জবি প্রশাসনের

এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিম্নবর্ণিত ৬টি দাবি প্রশাসনের হস্তগত হয়েছে।

দাবিগুলো হলো; আজীবনের জন্য ক্যাম্পাসে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রীদের হল খোলা রাখতে হবে এবং সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবির সংগ্রামে অংশ নিয়ে আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হবে।

আরো তিনটি দাবি হলো; কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা কর্মচারী ছাত্রলীগ সহ যেকোনো রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মেসে অবস্থান করা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মেসে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে হবে।আন্দোলনে ও মেসে হামলাকারীদের প্রশাসনে সোপোর্দ করতে হবে এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার আইনি সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এর আগে, বুধবার বিকালে প্রক্টরের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর ৬ দফা দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে দাবিগুলো মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয়ার আলটিমেটাম দেন তারা।

পরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন।