ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্যে বাংলাদেশের হতাশা প্রকাশ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন। ১৬ জুলাই, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বক্তব্যে, দুইজনের মৃত্যুর দাবি ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া, এ জাতীয় দাবি সহিংসতায় ইন্ধন জোগাতে পারে এবং শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেন, “যাচাইবিহীন তথ্যের ব্যবহার করে, এ ধরনের ভিত্তিহীন দাবি সহিংসতায় ইন্ধন জোগাতে পারে। অহিংস বিক্ষোভ বা আন্দোলনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় ১৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'অত্যন্ত হতাশ'। মিলার তার বক্তব্যে বাংলাদেশে চলমান শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কমপক্ষে দুইজন নিহত হওয়ার ভিত্তিহীন দাবি করেছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং সরকার জনগণের সম্পত্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নাগরিকদের অধিকার সমুন্নত রাখতে অবিচল রয়েছে।

গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই বলে উল্লেখ করেন মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন। বলেন, “সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা আমরা ভয়াবহতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছি।”

এ ঘটনায় বাংলাদেশ 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন' এবং এ ধরনের সহিংসতা গণতন্ত্রের মূল মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথকভাবে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং ট্রাম্প নিরাপদ আছেন এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন জেনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।”

গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।

মিলার যা বলেছিলেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় ঢাকায় চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে মিলার বলেন যে এ ঘটনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত আছে এবং বিষয়টি তাদের নজরে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার (ফাইল ছবি)

মিলারকে প্রশ্ন করা হয়, “গত কয়েকদিন বাংলাদেশে হাজারো শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা-ভিত্তিক নিয়োগ চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের হুমকি দেন। এমন কী, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি সেবা ইউনিটে প্রবেশ করার সময়ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। বাংলাদেশে চলমান এই আন্দোলন বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?”

প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, “আমরা ঢাকায় বড় আকারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে অবগত আছি এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর নজর রাখছি। বিক্ষোভে হামলার শিকার হয়ে দুইজন নিহত ও একশোজন আহত হয়েছে। মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার যেকোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের অপরিহার্য ভিত্তিপ্রস্তর এবং আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই। যারা এই সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি।”