কোটা সংস্কার আন্দোলন: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে নিহত ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন গুলিবিদ্ধ

বাংলাশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৬ জুলাই। ২০২৪।

বাংলাশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন সারাদেশের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে নগর ও সড়ক-মহাসড়কে বিস্তৃত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও সহিংসতা দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রংপুরে চারজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর, ঢাকায় মারা গেছেন একজন। অন্যদিকে, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে ৪ জন।

চট্টগ্রামে তিনজন নিহত

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নগরীর ষোলশহর থেকে মুরাদপুর এলাকার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র আকরাম (২৪) ও পথচারী ফারুক (৩৫)। অন্য নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান তিনি।

ফারুকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে, আকরামের শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানান পুলিশ কমিশনার। বলেন, “ফলে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ষোলশহরের ২ নম্বর গেট ও মুরাদপুরসহ নগরীর একাধিক স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। ফলে ঠিক কোনো স্থানে মৃত্যুগুলো হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীনও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে , দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো ষোলশহর ২ নম্বর গেইট থেকে মুরাপুর পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এর আগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিকাল ৩টা থেকে ষোলশহর স্টেশনে সমবেত হওয়া শুরু করে। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ মিছিল নিয়ে দুই নম্বর গেট থেকে মুরাদপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

এসময় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে; কারো কারো হাতে অস্ত্রও দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান চোখে পড়েনি। নগরীরর কেজিডিসিএল কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত মুরাদপুর-ষোলশহরে সংঘর্ষ চলছিলো।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা মুরাদপুর হয়ে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে ষোলশহর এলাকায় যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এরপর তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালান।

এসময় তাদের পক্ষের ২ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

রংপুরের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত

এদিকে, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু সাঈদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

ঢাকায় নিহত এক

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নিহত হয়েছেন এক যুবক। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে এখনো তার পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রিফাতুল ইসলাম জানান, বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে একদল লোক এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেন তিনি। পরে জানতে পেরেছে যে সেই ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনরত চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এই শিক্ষার্থীদের গুলি করে আহত করা হয়েছে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা যখন রায় সাহেব বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তখন একটি গলি থেকে গুলি ছোড়া হয়, এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনরত চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

এদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফেরদৌস আহমেদ ও অনিক গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা কোতোয়ালি জোনের এএসপি নজরুল বলেন, “গুলির খবর শুনেছি। কিন্তু আমরা দেখলাম মাত্র একটি দল মিছিল করছে। আমরা হামলাকারীকে দেখিনি।”

ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. আরিফ জানান, গুলিবিদ্ধ চার শিক্ষার্থীসহ আরো একজন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান ডা. আরিফ।

আগের হামলা

সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও হাসপাতাল সূত্র। বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

সংঘর্ষ বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থায়ী হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠি, স্টাম্প ও লোহার রড দিয়ে আন্দোলনকারীদের আঘাত করতে দেখা গেছে। এসময় অনেকে আহত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা শুরু হয়। ১৫ জুলাই, ২০২৪।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায় আহত অবস্থায় ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে, দুপুরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে কয়েক জন কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে বের হন। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গেটে তালা লাগিয়ে তাদের বাধা দেন। এতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন; সায়মা আফরোজ, শাহিনুর সুমি, সুমাইয়া আক্তার ও সানজিদা হক। আহতদের মধ্যে একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার (১৪ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফরমের আহবানে রবিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। বিক্ষোভো ছাত্রীরাও অংশ নেন।

এর আগে, চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি চাকরি পাবে, নাকি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা চাকরি পাবে? এটা জাতির কাছে আমার প্রশ্ন।”