উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

অঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিয়েছে। ১৪ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)। রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকেই এ অঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীর পানির স্তর নামছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি। আরো বলা হয়েছে, গঙ্গার পানি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এ অবস্থা বজায় থাকতে পারে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানির স্তর নামছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নামার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী সংলগ্ন এলাকা, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।

এফএফডব্লিউসি জানিয়েছে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকবে। আর, কুড়িগ্রাম জেলার দুধকুমার নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মহানন্দা নদী বাদে বাকি সব নদ-নদীর পানি কমতে পারে। আত্রাই নদীর তীরবর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি।

হাওর এলাকায় দুর্ভোগ

উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, সুরমা নদীসহ সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি কমলেও, ভোগান্তি বেড়েছে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের। নদীর পানি ধীরে কমায় ভোগান্তি দীর্ঘ হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের উঁচু এলাকায় পানি অনেকটা কমেছে। তবে নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘরে এখনো পানি রয়েছে। সড়কেও হাঁটু পানি। এছাড়া ভোগান্তিতে পড়েছেন সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, ছাতক, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দারা।

সুনামগঞ্জের উঁচু এলাকায় পানি অনেকটা কমেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের তথ্য মতে, রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় (১৩ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কমেছে ১৭ সেন্টিমিটার। এই ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ মিলিমিটার।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে অবস্থান করেছে। উজানে বৃষ্টি কম হচ্ছে। এখন বন্যা পরিস্থিতর উন্নতি হচ্ছে।

বৃষ্টির পূর্বাভাস

এদিকে রবিবার (১৪ জুলাই) আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় দেশের সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বলেছে আবাহওয়া দফতর।

শনি ও রবিবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ও ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যথাক্রমে রাজশাহী ও বান্দরবনে।

এদিকে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।