কোটা সংস্কার: ‘আন্দোলনকারীদের দাবি সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’, সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। “কোটা পদ্ধতি-সংক্রান্ত আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে;” আরো বলেন ওবায়দুল কাদের।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোটা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, একটি ষড়যন্ত্রকারী চক্র কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোটা পদ্ধতির অনুপস্থিতির ফলে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের হার ছিলো হতাশাজনক;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কোটার হার রয়েছে উল্লেখ করেন তিনি। জানান, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভারতে ৬০ শতাংশ, পাকিস্তান ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালের ৪৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৫০ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।

যা বলেছেন আইনমন্ত্রী

বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের নামে স্বাধীনতাবিরোধীরা যড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুক্রবার (১২ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

“যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো, কোটা আন্দোলনে সেই অপশক্তির ষড়যন্ত্র নেই, তা বলতে পারবো না;” যোগ করেন আনিসুল হক। তিনি আশা প্রকাশ করেনে যে কোটা আন্দোলন নিয়ে সর্ব্বোচ্চ আদালতের আদেশ মেনে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবেন।

জনগণের জানমাল রক্ষা করা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, যদি কেউ এ বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করে, তবে সরকারকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

ছাত্রলীগের ক্যাম্পেইন শুরু

সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে কী ভাবছেন, তারা কী চান, তা বোঝার জন্য 'পলিসি অ্যাডভোকেসি' ও 'ডোর টু ডোর' ক্যাম্পেইন শুরু করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

শনিবার (১৩ জুলাই) ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রলীগ বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করবে। উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক পদ্ধতি অবলম্বন এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কর্মসূচি পরিহার করবে ছাত্রলীগ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা, আলোচনা ও মতামত গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যমান পরিস্থিতির একটি গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক সমাধান, জনদুর্ভোগ এড়ানো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতির যৌক্তিক ও ইতিবাচক সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের যেকোনো মতামত লিখিতভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) অথবা officecellbsl@gmail.com ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ

এদিকে, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘বাংলা ব্লকেডের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।

বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।

এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়।

এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ৯ জুলাই আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।