পেনশন স্কিম: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন’, বললেন ওবায়দুল কাদের

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সাংগঠনিক বৈঠকের পর, কর্মবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। শনিবার (১৩ জুলাই) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।

পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ নিয়ে, গত ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতি নিরসনে, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি শিক্ষক প্রতিনিধি দলকে তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন এবং তাদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই প্রকল্প ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

“২০২৪ সাল থেকে এই প্রকল্প শুরু হবে বলে সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন তা ভুল ছিলো, পেনশন প্রকল্প ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হবে। আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করেছি;” আরো জানান ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা আমাদের তিনটি দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবো।”

এর আগে গত ৪ জুলাই ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক স্থগিত করা হয়।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন; আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাঁপা। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বৈঠকে যোগ দেন।

শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলে ছিলেন; বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম, মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম, অধ্যাপক শফিউল আলম ভূইয়া ও অধ্যাপক ইমতিয়াজ।

অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

এর আগে, ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের 'বৈষম্যমূলক' পেনশন ব্যবস্থার আওতা থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে, বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন। এর ফলে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। এর আগে রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের প্রধান ফটকে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির আওতায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত, সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল প্রোগ্রাম, অনলাইন ক্লাস ও অফলাইন ক্লাস, প্রশাসনিক কাজ এবং সব শ্রেণীর ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

চেয়ারম্যান কার্যালয়, হল প্রভোস্ট অফিস, গবেষণা কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ডিন অফিস, কম্পিউটার ল্যাব ও সেমিনার বন্ধ রাখা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছিলেন

গত ৩০ জুন, সর্বজনীন পেনশন (প্রত্যয়) স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছিলেন, শিক্ষকদের এ আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাসময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সেশনজটে পড়লে, মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলন করছেন। সেই অধিকার তাদের আছে। অনেকে বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তো এটা বোঝা যাচ্ছে যে, তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন।”

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা এই বিষয়ের দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পদক্ষেপ নেবো।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবে, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছে। শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে আলাদা করে কিছু করার নেই।