কোটা সংস্কার আন্দোলন: পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা শনিবার

কোটা সংস্কার আন্দোলন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা জানিয়েছেন যে শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে তাদের আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আবু বকর মজুমদার বলেন, সারাদেশের ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনের সব সমন্বয়কারী অনলাইন ও অফলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পরামর্শ করবেন। এর পর, তারা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আবু বকর মজুমদার আরো জানান, শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।

শাহবাগ মোড় অবরোধ

এর আগে, সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শুক্রবার (১২ জুলাই) শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে, তাদের শুক্রবারের ঘোষিত কর্মসূচি ছিলো মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে, দেশের সব ক্যাম্পাসে মিছিল করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তারা।

শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে সমবেত হন। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে যোগ দেয়।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীদের ওপর পুশের অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি মিছিলটি ক্যাম্পাসের কে.আর মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জব্বারের মোড়ে অবস্থিত শহীদ মতিউল-কাদের স্মৃতিসম্ভের সামনে অবস্থান নেয়।

জব্বারের মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে, প্রায় এক ঘণ্টা ময়মনসিংহ-গফরগাঁও আঞ্চলিক সড়কে যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

ডিএমপি কমিশনারের আহবান

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের প্রতি সম্মান জানাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহবান জানান তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আদালতের আদেশের প্রতি সবার আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। তিনি আরো বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সকল নাগরিকের। তাই সবার উচিত আদালতের নির্দেশ মেনে চলা এবং সম্মান করা।”

আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডিএমপি কমিশনার।

কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ

এদিকে, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘বাংলা ব্লকেডের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।

বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ কোটা সংস্কার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর করা আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিভ-টু-আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগে আবেদন করেন ২ জন কোটা আন্দোলনকারী। বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে চেম্বার আদালত।

এর আগে ৪ জুলাই রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করে আপিল বিভাগ।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে এ বছরের ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়।

এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ৯ জুলাই আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।