বাইডেন ঘোষণা করলেন তিনি ২০২৪ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার এক বহুল-প্রতীক্ষিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পররাষ্ট্র এবং অভ্যন্তরীণ নীতির পক্ষে জোরাল বক্তব্য তুলে ধরেন, এবং আরও চার বছর দায়িত্ব পালন করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নাকচ করে দেন।

তবে, প্রশ্নোত্তরের শুরুতেই তিনি একটি উত্তর দেয়ার সময় ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম নভেম্বরের নির্বাচনে তাঁর রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে গুলিয়ে ফেলেন।

“আমি ইতিহাসে আমার স্থানের জন্য এটা করছি না। আমি যে কাজ শুরু করেছি সেটা সম্পন্ন করার জন্য আছি,” বাইডেন বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন ভোটারদের মধ্য তাঁর শক্ত সমর্থন আছে এবং তিনি প্রতিযোগিতায় থাকবেন এবং জয়ী হবেন।

তাঁর চিন্তা-ভাবনার গতি থেমে যাচ্ছে বা তাঁর মানসিক তীক্ষ্ণতা ক্ষয় হচ্ছে, এ’ধরনের কথা-বার্তা প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোঁচট খাওয়া সত্ত্বেও শক্তভাবে নাকচ করে দেন। তবে বেশ কিছু আইনপ্রণেতা, তারকা এবং ডেমোক্র্যাট দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাঁকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছে।

“আমার দিনের সময়সূচী একেবারে পরিপূর্ণ,” তিনি ঘোষণা করেন। “আমি যদি ধীর হয়ে যাই এবং আমার কাজটা করতে না পারি, তাহলে সেটাই হবে ইঙ্গিত যে আমার কাজটা করা উচিত হবে না। কিন্তু সেরকম কোন ইঙ্গিত এখনো নেই – একেবারেই না।”

সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফটোঃ ১১ জুলাই, ২০২৪।

ডেমোক্র্যাটদের সন্দেহ

ডেমোক্র্যাটরা এক জটিল সমস্যার মুখে পড়েছে। গত মাসের ২৭ তারিখের টেলিভিশন বিতর্কে বিপর্যয়ের পর থেকে অনেকে - দলের অর্থ ভাণ্ডারে অনুদানকারী, দলের সমর্থক এবং গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতা - সন্দেহ করছে তিনি পুনঃনির্বাচনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা। কিন্তু ৮১-বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্টের হাল ছেড়ে দেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এবং তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফিরতি খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নকর্তা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস নিয়ে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু বাইডেন হ্যারিস আর ট্রাম্প গুলিয়ে ফেলে বলেন, “আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করতাম না, যদি তিনি কোয়ালিফাইড না হতেন।”

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, ডেমোক্র্যাট দলের এক ডজন আইন প্রণেতা তাঁকে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল আরও চার বছরের জন্য তাঁর সক্ষমতা প্রমাণ করা; ভোটাররা পর্যবেক্ষণ করছে, এবং নির্বাচিত নেতারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা অন্য কোন প্রার্থীর জন্য চাপ দেবেন কিনা।

জুন মাসের টেলিভিশন বিতর্কে ডলান্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফটোঃ ২৭ জুন, ২০২৪।

ট্রাম্পের ব্যঙ্গ

বাইডেনের সংবাদ সম্মেলন চলার সময় ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম নেটওয়ার্কে একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করেন যেখানে বাইডেন বলছেন, “ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।”

ট্রাম্প ব্যঙ্গ করে যোগ দেন, “দারুণ বলেছো, জো!”

এর আগে, বাইডেনের প্রচারণা টিম নির্বাচনে বিজয়ের জন্য করণীয় নিয়ে একটি নতুন রোড ম্যাপ প্রকাশ করে। সেখানে তারা ঘোষণা করে যে অন্য কোন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ট্রাম্প-এর বিরুদ্ধে বাইডেনের চেয়ে ভাল করবে না।

“কোন ইঙ্গিত নেই যে অন্য কেউ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের চেয়ে ভাল করবে,” প্রচারণা টিমের প্রধান জেন ও’ম্যালি এবং ম্যানেজার জুলি শাভেজ রড্রিগেজ মেমোতে লেখেন, যে মেমো এপি সংগ্রহ করেছে।

“আমার মনে হয় আমি এই দায়িত্বের জন্য সব চেয়ে বেশি কোয়ালিফাইড,” বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেন।

বাইডেন যদিও নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে আস্থা প্রকাশ করছেন, তাঁর প্রচারণা দল বৃহস্পতিবার স্বীকার করেন যে তিনি জনমত জরীপে পিছিয়ে আছেন। হোয়াট হাউসে প্রেসিডেন্টের অনেক সহকারী এবং তাঁর প্রচারণা টিমের সদস্য আড়ালে সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে তিনি মোড় ঘুরাতে পারবেন না।

'বিগ বয়' সংবাদ সম্মেলন

এর আগে ভিওএ-র কেন ব্রেডেমাইয়ার জানানঃ বাইডেনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন ছিল হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তাঁর প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ওয়াশিংটনে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন শেষে তিনি একক ভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা এটাকে “বিগ বয়” সংবাদ সম্মেলন বলে অভিহিত করে স্বীকার করেছেন এই সংবাদ সম্মেলন একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। গণমাধ্যমের সাথে বাইডেনের অন্যান্য কথোপকথনের সাথে এই সংবাদ সম্মেলনের পার্থক্য ছিল। সাধারণত, তাঁর পাশে কোন বিদেশি নেতা থাকেন, তাঁরা প্রত্যেকে দু-তিনটা প্রশ্ন নেন এবং তারপর বিদায় নেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে তাঁর দীর্ঘ দিনের মিত্ররা বাইডেনের মানসিক তীক্ষ্ণতা এবং শারীরিক সহনশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা দু’সপ্তাহ আগে টেলিভিশন বিতর্কে বাইডেনের কিছুটা ভ্রান্ত, থেমে থেমে কথা বলার ধরন নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে।

বিতর্ক বিপর্যয়

ট্রাম্পের সাথে বিতর্কের সময় বাইডেন প্রায়ই তাঁর চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন এবং তাঁর রিপাবলিকান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া জবাব দিতে যেমন ব্যর্থ হন, তেমনি নিজের সাড়ে তিন বছরের প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের পক্ষে জোরাল বক্তব্যও রাখতে পারেননি।

সেদিনের পর থেকে বাইডেন বিতর্কে তাঁর পারফরমেন্সকে “একটি খারাপ রাত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিতর্ককে তাঁর মানসিক তীক্ষ্ণতার ক্ষয়ের ইঙ্গিত হিসেবে গ্রহণ করেননি।

কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক কর্মকর্তা জনসমক্ষে এবং আড়ালে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আহবান জানিয়েছে। বাইডেন ২০২০ সালে অল্প ব্যবধানে ট্রাম্পকে হারিয়েছিলেন এবং অনেকে এখন প্রশ্ন করছেন তিনি ট্রাম্পকে এবার হারাতে পারবেন কিনা।

যেসব রাজ্যে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থীদের জিততেই হবে, সেসব রাজ্যে জনমত জরীপে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে আগিয়ে আছেন।

বাইডেন তাঁর মেয়াদের এই পর্যায়ে ১৯৮০’র দশকে রোনাল্ড রেগানের পর যেকোন প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বাইডেন শেষবার একক সংবাদ সম্মেলন করেন আট মাস আগে।