কোপা আমেরিকাঃ মেসির 'শেষ লড়াই' আর্জেন্টিনাকে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে

কোপা আমেরিকার সেমি ফাইনালে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) কানাডার বিরুদ্ধে গোল দেবার পর লিওনেল মেসির আনন্দ। ফটোঃ ৯ জুলাই, ২০২৪।

লিওনেল মেসি আর আর্জেন্টিনা আর মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেলেই পর পর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট জয়ে স্পেনের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে।

“এই দল যা করেছে, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল যা করছে, তা একেবারেই পাগল করার মত ব্যাপার,” মেসি মঙ্গলবার বলেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর ১০৯ নম্বর গোল কানাডার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ২-০ জয় নিশ্চিত করে এবং দলকে এই সপ্তাহান্তের কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে দেয়।

“জাতীয় দল আরেকটা ফাইনালে পৌঁছেছে, এটা অসাধারণের চেয়েও অনেক বেশি,” বলেন মেসি, যিনি ২৪ জুন তাঁর ৩৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেন।

কানাডার বিরুদ্ধে ম্যাচে জুলিয়ান আলভারেজ ২২ মিনিটের মাথায় রদ্রিগো দে পলের পাস রিসিভ করে, ময়সে বমবিতোকে পাশ কাটিয়ে প্রতিপক্ষ গোলকিপার ম্যাক্সিম ক্রেপও-র পায়ের ফাঁক দিয়ে তাঁর ৯ম আন্তর্জাতিক গোল করেন।

মেসি ৫১ মিনিটে এই টুর্নামেন্টে তাঁর প্রথম গোল করেন, যা ছিল কোপা আমেরিকায় তাঁর ১৪তম গোল – রেকর্ড সংখ্যা থেকে মাত্র তিন কম। মেসি আর্জেন্টিনার শেষ ২৫ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন।

মেটলাইফ স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা মেসির পাশে দিয়েগো ম্যার‍্যাডনাকেও স্মরণ করে। ফটোঃ ৯ জুলাই, ২০২৪।

সামনে শুধু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো

আন্তর্জাতিক ফুটবলে শুধু পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ১৩০ গোল নিয়ে মেসির চেয়ে এগিয়ে আছে। ইরানের আলী দায়েই ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে ১০৮ বা ১০৯ গোল করেন। একুয়েডরের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে তাঁর গোল নিয়ে বিতর্ক আছে,কারণ সেই ম্যাচ আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক খেলা ছিল কি না,তা নিয়ে দ্বিমত আছে।

দেশের স্বাধীনতা দিবসে (৯ জুলাই) জয় দিয়ে আর্জেন্টিনা তাদের অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা ১০ ম্যাচে নিয়ে যায়। আলবিসেলেস্তে রবিবার (১৪ জুলাই) যখন ফ্লোরিডার মায়ামি গার্ডেনস-এ ফাইনালে খেলবে, তখন তারা রেকর্ড ১৬তম কোপা শিরোপার জন্য লড়াই করবে।

“আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমদেরকে এঞ্জয় করতে হবে,” মেসি বলেন। “আমি জানি যে এগুলো শেষ লড়াই।”

আন্তর্জাতিক ট্রফির হ্যাট্ট্রিক

আর্জেন্টিনা ২০২১ সালের কোপা শিরোপা আর ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে ২০২৪ সালের কোপা যোগ দিয়ে স্পেনের কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে। স্পেন ২০০৮ এবং ২০১২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-এর শিরোপা এবং তার মাঝে ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ জয় করে।

“এগুলো পরিসংখ্যান। এগুলোতে আমার তেমন কোন আগ্রহ নেই,” বলেন আর্জেন্টিনা দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি। “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খেলায় জেতা।”

কানাডাকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে আবেগ-আপ্লুত আর্জেন্টিনার (বাঁ দিক থেকে) আঙ্গেল ডি মারিয়া, এনজো ফারনান্ডেজ, লিওনেল মেসি আর নিকোলাস ওটামেন্ডি। ফটোঃ ৯ জুলাই, ২০২৪।

পায়ে আঘাত পাওয়ায় মেসি চলতি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি। একুয়েডরের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার-ফাইনালে মেসি ৯০ মিনিট খেললেও, কিছুটা নির্লিপ্তই ছিলেন।

খারাপ মাঠ, কঠিন কোপা

তবে কোপায় তাঁর ৩৮তম ম্যাচে কানাডার বিরুদ্ধে মেসি বেশ প্রাণবন্ত ছিলেন এবং ১২ আর ৪৪ মিনিটে তাঁর শট অল্পের জন্য গোলের পাশ দিয়ে যায়। তাঁর সফল পাসের রেট ছিল ৭৯ শতাংশ।

“তারা এসব ছোট-খাটো জিনিস দিয়ে আমাদের শাস্তি দেয়,” বলেন কানাডার গোলকিপার ম্যাক্সিম ক্রেপও।

মেটলাইফ স্টেডিয়ামের অস্থায়ী ঘাসের মাঠ দেখে বেশ ভারি মনে হচ্ছিল, পানি জমে ছিল এবং ড্রিবলিং-এর সময় বালুও উঠে আসছিল।

“এই কোপা আমেরিকা খুব কঠিন ছিল,” মেসি বলেন। “খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, খারাপ মাঠ আর অতিরিক্ত গরম।”

মেটলাইফ স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে সমবেত হয় আর ম্যানহাটানের রাস্তা ভরে ফেলে। স্টেডিয়ামে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ আর ৮২ শতাংশ আর্দ্রতার মাঝে উপস্থিত ৮০,১০২ দর্শকের অধিকাংশ ছিল আর্জেন্টিনা সমর্থক। স্টেডিয়ামের দু’একটি জায়গা ছিল লাল জামা পরা কানাডার সমর্থকদের দখলে।

মেসি যদিও “শেষ লড়াই”-এর কথা বলছেন, স্কালোনি আর ভক্তরা আশা করছেন মেসি আর আর্জেন্টিনা ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে এই মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফিরে আসবে।

“আমরা কখনোই আমাদের দরজা বন্ধ করবো না,” স্কালোনি বলেন। “মেসি যত দিন চাইবে, ততদিন সে আমাদের টিমের সাথে থাকতে পাড়বে।”