পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান রাষ্ট্রীয় চীন সফর সংক্ষিপ্ত করা হয়নি। বরং অসুস্থ মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে সময় দিতেই বুধবার রাতে দেশে ফিরছেন তিনি।
বুধবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, “তাঁর (শেখ হাসিনা) অফিসিয়াল ব্যস্ততায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আজ (বুধবার) রাতে তাঁর বেইজিংয়ে থাকার কথা ছিল। তবে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে ফিরছেন তিনি।”
হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের এই সফরে থাকার কথা থাকলেও ৮ জুলাই সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি আসতে পারেননি।
সায়মা ওয়াজেদ এখনো অসুস্থ বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও চীন বুধবার ২১টি সহযোগিতা নথিতে সই করেছে। যার বেশির ভাগই সমঝোতা স্মারক। এসব নথিতে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পর্কিত যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই শেষসহ ৭টি প্রকল্পের ঘোষণা রয়েছে।
চীনে দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে বুধবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট বুধবার রাত ১০টায় (স্থানীয় সময়) বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে এবং ফ্লাইটটির বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং ত্যাগ করার কথা ছিল।
৮ থেকে ১০ জুলাই বেইজিংয়ে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী বুধবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা চীনের প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
বুধবার (১০ জুলাই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সব বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
হাছান মাহমুদ আরও জানান, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছয়টি সফরের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল তা স্মরণ করে লি কিয়াং বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আগামী বছর বাংলাদেশ সফরের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী যথাযথভাবে উদযাপনের ওপর দুই নেতাই গুরুত্বারোপ করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়াও, তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জবাবে চীনে আরও বাংলাদেশি পণ্য আমদানির কথা বলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
এসময় চীনের প্রধানমন্ত্রীকে চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, ওষুধ পণ্য ও সিরামিক পণ্য আমদানির অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বজুড়ে মানবতা সমুন্নত রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বরাদ্দ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়াও, ব্রিকসে যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এই অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাস দেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।
২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণের পর বাংলাদেশ যাতে কমপক্ষে তিন বছর এলডিসি সুবিধা লাভ করতে পারে এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।