রাশিয়ার একগুচ্ছ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণে ইউক্রেনের কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং ১৭০ জনেরও বেশি আহত হবার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি বৈঠকে বসেছে এবং ইউক্রেন মঙ্গলবার শোকদিবস ঘোষণা করে।
একাধিক শহরের উপর হামলায় আঘাত হানা লক্ষ্যবস্তুগুলির মধ্যে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালও ছিল। মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, দিনের বেলায় ধারাবাহিক এই আক্রমণ ছিল যুদ্ধের সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর অন্যতম।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এই হামলার কড়া নিন্দা করে বলেছেন রাশিয়াকে জবাবদিহি করতে হবে।
ওয়াশিংটনে নেটো শীর্ষ বৈঠকের অবকাশে মঙ্গলবার জেলেন্সকি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে তিনি নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, “ অগ্রধিকারের ভিত্তিতে আলোচনা হবে। এগুলো হচ্ছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । আমার মনে হয় এর পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য নেতারা এখনকার তুলনায় আরো সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। অবশ্য আমি প্রেসিডেন্ট, তার প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁরা যে থোক সহযোগিতা অনুমোদন করেছেন। আমরা আশা করি এগুলো ক্রমশই যুদ্ধক্ষেত্রে আসবে এবং ধীরে ধীরে আমাদের সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।
সোমবার এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন যে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, “ রাশিয়ার নৃশংসতার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে” এবং ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের “ অনমনীয়” সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।
বাইডেন বলেন. “ আমাদের মিত্রদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আমরা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ ঘোষণা করবো যাতে করে রুশ আক্রমণ থেকে তাদের নগর ও নাগরিকদের রক্ষা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জনগণের সাথেই রয়েছে”।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্র কুলেবা মঙ্গলবার তাঁদের বৈঠকের আগেই ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কথা বলেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক
কিয়েভে ওখমাতদিত শিশু হাসপাতালে আক্রমণ সম্পর্কে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জোর দিয়েই বলেন যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে হাসপাতালগুলি সুরক্ষিত।
জয়েস মাসুয়া বলেন, “ সুরক্ষিত হাসপাতালের উপর ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধ এবং অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে”।
তিনি বলেন নিবিড় পরিচর্যা ,অস্ত্রোপচার এবং ক্যান্সার চিকিৎসার ওয়ার্ডগুলো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের ডায়ালিসিস সেন্টার ভেঙ্গে পড়ে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ইউক্রনের প্রতিরক্ষা স্থাপনা ও সামরিক বাহিনীর বিমান ঘাঁটি এবং এতে তারা সফল হয়েছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত এ কথারই প্রতিধ্বণি তুলে বলেন যে নিরাপত্তা পরিষদকে ইউক্রেন ও তার সমর্থকদের “নোংরা অপপ্রচার অভিযানের” দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা টমাস-গ্রীনিফল্ড বলেন, “ গতকালের আক্রমণ এ কথাটা যথেস্ট পরিস্কার করে দিয়েছে : পুতিন শান্তিতে আগ্রহী নন। তিনি তাঁর আগ্রাসী যুদ্ধে মৃত্যু ও ধ্বংস নিয়ে আসতে সংকল্পবদ্ধ”।
মঙ্গলবারের আক্রমণ
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে মঙ্গলবার তারা বেলগোরোদ, কুরস্ক, ভরোনজেহ , রোস্তোভ ও আস্ত্রখান অঞ্চলে ইউক্রেনর ৩৮ টি উড়ন্ত ড্রোন ভূপাতিত করেছে।