মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের, তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা কামনা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চীনের গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ওয়াং হানিংয়ের নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ শাখা ন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এবিষয়ে অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন যে শেখ হাসিনা বলেছেন “রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের সহায়তা করুন।”
হাছান মাহমুদ আরো জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমানো, আগামী বছর দু'দেশের মধ্যে অর্থবহ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে এবং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
হাছান মাহমুদ জানান যে এই বিষয়টি বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সিপিপিসিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবেন।
হাছান মাহমুদ জানান, সিপিপিসিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, “আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবো।”
এআইআইবির প্রতি আহবান
এদিকে, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতি বাংলাদেশের ঋণের সুদের হার আরো কমানোর আহবান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বেইজিং ভিত্তিক এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন এবং প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার সঙ্গে তার আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ সময় শেখ হাসিনা এই আহবান জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ, নদী খনন ও জলবায়ু খাতে অর্থায়ন; বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু সহিষ্ণু আবাসন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের অবহিত করেন করেন। হাছান মাহমুদ জানান যে শেখ হাসিনা বলেছেন, অতীতে এআইআইবি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ঋণদাতা এআইআইবি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী; জানান হাছান মাহমুদ। তিনি আরো জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এআইআইবি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আরো জানান যে শেখ হাসিনার আহবানের জবাবে এআইআইবির কর্মকর্তারা বলেছেন “বাংলাদেশ এআইআইবির সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে অন্যতম। সুদের হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান।