কোটা বিরোধী আন্দোলন: বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা 'বাংলা ব্লকেড' পালনের ঘোষণা

আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ‘বাংলা ব্লকেড' চলবে। ৭ জুলাই, ২০২৪।

কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিতে, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে, বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মীরা। তবে. মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তারা কেনো কর্মসূচি পালন করেননি।

মঙ্গলবার(৯ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

এর আগে, সোমবার(৮ জুলাই) তারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে আন্দোলন করছি না। বরং আমরা এই ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।”

“কিছু গণমাধ্যম আমাদের দাবির ভুল ব্যাখ্যা করেছে। এই আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটার বিরুদ্ধে। এখন আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। কৃষক, শ্রমিক-প্রবাসী সকলেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন;” তিনি যোগ করেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের সংহতি প্রকাশ

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে ১২০ থেকে ১৪০ জন শিক্ষার্থী।

এসময় কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সংবাদ বিবৃতি দেয় তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, “যুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই একটা সময় পর্যন্ত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা যৌক্তিক ছিলো। কিন্তু, তাদের উত্তরসূরিরা একই বিষয়ের মধ্য দিয়ে যায়নি। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় কোটা পদ্ধতির সংস্কার জরুরি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “এছাড়া, ১০ শতাংশ নারী কোটা খুবই লজ্জাজনক নারীদের জন্য। তাই এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।”

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ

এদিকে, মঙ্গলবার ঢাকায় কর্মসূচি না থাকলেও, কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীর কোটা বাদে, সব কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সারা দেশের সঙ্গে বরিশালের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মহাসড়কে অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা দেয়; দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

কর্মসূচিতে, যেকোনো পরিবেশ-পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিএম কলেজ শিক্ষার্থী হুজাইফা রহমান বলেন, “১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশকে মুক্ত করা হলেও, আজ কোটা পদ্ধতি পাকিস্তানী শোষণ-বৈষম্য বহন করছে।” তিনি আরো বলেন, “অতি দ্রুত আমরা এ কোটা পদ্ধতি থেকে মুক্তি চাই।”

“আমাদের দাবি হলো, মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হোক। আমরা শিক্ষার্থীরা আগের মতো ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। তাই যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আমাদেরকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিন;” যোগ করেন হুজাইফা রহমান।