‘মুক্ত খালেদাকে কিভাবে মুক্তি দেবো, বুঝে উঠতে পারছি না’, মন্তব্য আইনমন্ত্রীর

বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “বিএনপির মুক্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কিভাবে মুক্তি দেবো, তা বুঝে উঠতে পারছি না।”

বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার শর্তহীন মুক্তির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আনিসুল হক।

“দেখুন, আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না। খালেদা জিয়া মুক্ত, এই মুক্ত মানুষকে আবার কি-করে মুক্তি দেব?” প্রশ্ন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার (৮ জুলাই) খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না উল্লেখ করে তার মুক্তি দাবি করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল:‘খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি একটি জাতীয় দাবি’

এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে, সোমবার (৮ জুলাই) বিকালে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

“ভোরে তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা বারবার বলে আসছি, তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বিদেশে তার চিকিৎসার বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না;” তিনি আরো বলেন।

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৮ জুলাই, ২০২৪।

খালেদা জিয়ার জীবন এখন বিপন্ন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। বলেন, “আমরা মনে করি, খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না।”

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি একটি জাতীয় দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি। আরো বলেন, “তার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব জানান যে খালেদা জিয়ার রোগগুলো ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং তাকে ঘন ঘন হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার (৮ জুলাই) ভোর সোয়া ৪টার দিকে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, ২৩ জুন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল সফলভাবে তার বুকে পেসমেকার বসান। পরে তিনি বাসায় ফিরে যান।

খালেদা জিয়া, রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে গুলশানের বাসায় ফিরেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী, ২ জুলাই খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। (ফাইল ছবি)

২০২২ সালের ১১ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ৯৫ শতাংশ ব্লক ছিলো। সে সময় স্টেন্ট বসানোর মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই বছরই, আরেকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে।

গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন তার চিকিৎসকরা।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেটে ও বুকে পানি জমে ও লিভারে রক্তক্ষরণ হয়। পরে, তার চিকিৎসায়, ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।