কোটা পদ্ধতিঃ সরকার বলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিতর্কের নিরসন হবে

ঢাকায় হাই কোর্ট ভবনঃ সরকারী চাকরীতে কোটা প্রথা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ফটোঃ ১৩ এপ্রিল, ২০২০।

কোটা বাতিলের দাবিতে করা মামলার আপিলে আন্দোলনকারীরা পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আরো বলেন, “সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আপিল বিভাগ ন্যায়বিচার করবে; এটাই আমাদের আশা এবং আমার মনে হয় এমনটাই হবে।”

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। কোটা আন্দোলন নিয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন “প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছেন, এখানে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো বিষয় নেই।”

“কারণ, কোটার ইস্যুটা এখন সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আছে। সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, তারা সব পক্ষকে শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে;” যোগ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আন্দোলনের বিষয়ে মন্ত্রীদের বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “তারা (কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী) আপিল বিভাগের মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল (১০ জুলাই) শুনানি হবে। সেক্ষেত্রে আমি তো মনে করছি তারা সঠিক পথে হাঁটছেন।”

তিনি আরো বলেন যে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা চলমান; কিন্তু যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন, তারা নিজেদের বক্তব্য আদালতের কাছে পেশ করার জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি। মামলাটির রায় হয়ে গেছে। মামলাটি এখন আপিল বিভাগে আছে। সোমবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য কোনো আইনজীবী ছিলেন না; জানান আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ফটো।

“ঘটনা ঘটছে আদালতে। সেখানে রাজপথে আন্দোলন করে বকাবকি করে, এর নিরসন হবে না। এটি করলে যা হয়; একপর্যায়ে হয়তো তা আদালত অবমাননা হয়ে যেতে পারে: আনিসুল হক যোগ করেন। তিনি আরো বলেন, তারা যদি পক্ষভুক্ত হয়ে তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন, তবে আপিল বিভাগ সব পক্ষের কথা শুনে একটা ন্যায় বিচার করবে।

আনিসুল হক বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশা করি, যেহেতু তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন।

সরকারের কেউ কেউ বলেছেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন অযৌক্তিক; এক্ষেত্রে আদালত প্রভাবিত হতে পারে কি না; জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এ মামলায় কী হতে পারে, এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। কারণ এটা সাব-জুডিস (বিচারাধীন)। বাইরে থেকে একজন আইনমন্ত্রী হিসেবে বা আইনের দিক থেকে যতটুকু বলার দরকার সেটুকুই বলেছি।”

আদেশ স্থগিত চেয়ে ২ শিক্ষার্থীর আবেদন

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন দুই শিক্ষার্থী। এই দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের আদালত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শুনানির দিন ধার্য করেন। এর আগে সকাল ১১টার দিকে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে এফিডেভিট দায়েরের জন্যে দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে আবেদন করা হয়।

চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এফিডেভিট দাখিলের জন্যে অনুমতি দিলে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দায়ের করা হয়। আবেদনকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আলসাদি ভূঁইয়া এবং আহনাফ সাঈদ খান।

তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আদালতের কার্যক্রম

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রিটকারী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়। এ আদেশের পর কোটাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

রিট আবেদনকারী পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেন সর্বোচ্চ আদালত।

এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, চাইলে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। এমন মন্তব্যের পর মঙ্গলবার দুইজন শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের পক্ষে আবেদন করেন। আবেদনে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে, গত ৫ জুন হাইকোর্ট নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৯ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আসে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।

সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। ক্রম অনুসারে বিষয়টি উত্থাপিত হলে, রিট আবেদনকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মো. জহিরুল ইসলাম একদিনের (নট টুডে) সময়ের প্রার্থনা করেন।