‘বিএনপি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে না’, বললেন মির্জা ফখরুল

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৮ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বিএনপি কোনো উসকানি দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “বিএনপির এ ধরনের আন্দোলনে জড়ানোর কোনো কারণ নেই।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের এ ধরনের আন্দোলনে ইন্ধন দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এই সব আন্দোলন তাদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের) নিজস্ব।”

সোমবার (৮ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে আন্দোলন পরিচালনা করছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা কেন এই আন্দোলনে উসকানি দেবো? আমাদের এটা করার কোনো কারণ নেই।” বিএনপি মহাসচিব জানান, তাদের দল মনে করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক।

তিনি বলেন, “আমরা যা যৌক্তিক তা নিয়ে এবং তার পক্ষে কথা বলবো। আমরা সবসময় এটা করে আসছি।” পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিএনপিকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।

“দেশের মানুষ যখন নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তা আমাদের অনেক আশা জাগায়;” মির্জা ফখরুল যোগ করেন। তবে দেশের অন্যান্য সমস্যা থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি আন্দোলন তৈরি করেছে কি না, তা নিয়ে বিএনপি সন্দিহান বলে জানান মির্জা ফখরুল।

“যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন-কে আমরা সমর্থন করি। আমরা এটাকে অযৌক্তিক মনে করার কোনো কারণ দেখছি না;” আরো বলেন তিনি।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বজায় রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, এটি মেধার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ থেকে বিরত রাখা হয়। এতে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, সরকার নিজ অবস্থান থেকে সরে এসে শিক্ষকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে চাচ্ছে। তাই তাদের আন্দোলন একটি যৌক্তিক দাবির ওপর ভিত্তি করে হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

“আপনারা (সরকার) আগেই বলেছিলেন, যারা ইতোমধ্যে পেনশন পাচ্ছেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নেই। যারা পাচ্ছেন না, শুধু তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এখন এটা ঐচ্ছিক না রেখে শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন;” বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

‘বিএনপি আন্দোলনকে সমর্থন করে’

এর আগে, ৬ জুলাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক এবং তাদের চলমান আন্দোলনের প্রতি বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, দায়িত্বশীল দল হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী সম্পর্কে বিএনপি অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাবে। “তারা (শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা) তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে । আর তা অব্যাহত থাকবে। আমরা কি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারি না?” প্রশ্ন করেন বিএনপি মহাসচিব।

শিক্ষকদের জন্য 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম বাতিল এবং সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে এনে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

শেখ হাসিনা: ‘আন্দোলন অযৌক্তিক, বিষয়টি বিচারাধীন’

এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “এটি বিচারাধীন বিষয়।”

রবিবার (৭ জুলাই) যুব মহিলা লীগের ২২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

“পড়াশোনার সময় নষ্ট করে আজকে আন্দোলনের নামে যা করা হচ্ছে, তার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না;” বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ঠিক নয় এবং এটি বিচারাধীন বিষয়।

“যদি হাইকোর্ট কোনো বিষয়ে রায় দেন, তাহলে সেটার যেকোনো পরিবর্তন আবার হাইকোর্ট থেকে আসতে হবে;” তিনি যোগ করেন। বলেন, সরকার এর আগে ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলো। কিন্তু, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন জেলার, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এমনকি নারীরাও চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

“অতীতে কোটা পদ্ধতির কারণে বিপুল সংখ্যক মেয়ে চাকরি পেতো, গত কয়েক বছরে মেয়েদের সে সুযোগ মেলেনি;” আরো বলেন শেখ হাসিনা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া মেয়েদের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে। এর আগে যারা (২০১৮ সালে) আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলো, তাদের মধ্যে কতজন (মেয়ে) পিএসসি পরীক্ষায় বসেছিলো এবং তাদের মধ্যে কতজন উত্তীর্ণ হয়েছে, তার হিসাব বের করা দরকার।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের আগে প্রমাণ করতে হবে যে তাদের মধ্য থেকে আরো বেশি সংখ্যক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।