গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের করা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সোমবার (৮ জুলাই) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে এ আবেদন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ব্যারিস্টার মামুন বলেন, “টাকা আত্মসাতের মামলায় অযৌক্তিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সেই অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে।”
শিগগিরই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে, গত ১২ জুন গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায়, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন।
এ মামলায় আগামী ১৫ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছিলো। গত বছরের ৩০ মে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় জামিন
এর আগে, গত ৩ মার্চ দুর্নীতি মামলায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ আট জনকে জামিন দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহাম্মদ আলী সালাম জানান, শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ২ এপ্রিল ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়।
এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। আদালত, ৩ মার্চ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছিলো।
ড. ইউনুস ছাড়া, অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন; গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
এছাড়া, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান অভিযুক্ত ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য
অন্যদিকে, বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আনিসুল হক বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য সরকার কিছু করছে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিলো, তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে। আমি কেবল বলবো, দেশ আমাদের সবার। নির্বাহী, আইনসভা কিংবা বিচার বিভাগ সব বিষয়ে দেশের অর্জনই দেশের মানুষের।”
আনিসুল হক আরো বলেন, “অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে; তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরো বলা হচ্ছে, আমরা তাকে হয়রানির জন্য এটা করছি।”
এ ছাড়া, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত স্বচ্ছ। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।”
তিনি আরো বলেন, “তার জামিন পাওয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে চলছে।” হাছান মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসের সংগঠনের বঞ্চিত কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করেছে, সরকার এতে কোনো পক্ষ নয়।