সনাতন ধর্মালম্বীদের রথযাত্রার সময়, বাংলাদেশের বগুড়ার সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় হতাহতের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, আহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রথযাত্রার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হন।এরপর রাতেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে রয়েছেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি। এ কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
রবিবার রাতেই নিহতদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন; বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুন্দুগ্রামের ভবানী মোহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত, শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকার মন্তেস্বরের স্ত্রী আতশী, শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের সুদেবের স্ত্রী রনজিতা, শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের মৃত নারায়ণ কুমারের ছেলে অলক কুমার ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার বাসুদেব সাহার স্ত্রী জলি সাহা।
আহতদের মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৪৩ জন। বিদ্যুতের স্পর্শে সৃষ্ট আগুনে অনেকের শরীর ঝলসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্য এবং রথযাত্রায় অংশ নেয়া শত শত মানুষ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভিড় করেন।
এই ঘটনার পর রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়। দুর্ঘটনার পরপরই বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রর্বত্তী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটন হাসপাতালে যান।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সৎকারের জন্য প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হবে। এছাড়া আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরের কাছে সেউজগাড়ি পালপাড়া এলাকায় রথযাত্রার উদ্বোধন করা হয়। এরপর রথটি ৫০০ গজ পূর্ব দিকে সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে পৌঁছার পর, রথের লৌহ দণ্ডটি সড়কের ওপরের ১১ হাজার ভোল্টের তারের সংস্পর্শে আসে। তখনই আগুন ধরে যায়।
এ সময় হুড়োহুড়িতে মানুষ সড়কের ওপর পড়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এই হাসপাতালে বর্তমানে ৩৮ জন চিকিৎসাধীন আছন। তাদের মধ্যে ২ জন আইসিইউতে রয়েছেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে একজন মারা গেছেন এবং সেখানে আরো ৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বগুড়া পৌর কমিটির পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, রথ যাত্রার শুরুতে দুঃখজনখ হতাহতের ঘটনার পর রথযাত্রা কিছু সময় থামিয়ে রাখা হয়েছিলো। পরে শুরু করা হয় এবং সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করা হয়।
নেসকোর ইঞ্জিনিয়ার যা বললেন
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ জানিয়েছেন, রথযাত্রাটি লতিফপুর এলাকার শিব মন্দিরের দিকে যাওয়ার সময় রথের উপরের লোহার রডটি ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার স্পর্শ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানান নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ।
সড়কের ওপর সরবরাহ লাইনের তার খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে এম এ মান্নান বলেন, “শুধু বগুড়ায় নয়, সারাদেশে ১১ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার এভাবেই রয়েছে।”
রথযাত্রায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার
বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সোমবার (৮ জুলাই) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রথযাত্রায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন দুই রোগীকে দেখতে যান তিনি। এর পর এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, “রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আশ্বস্ত করেছি যে সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার সব খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রথযাত্রায় যে দুর্ঘটনা হয়েছে তা খুবই মর্মান্তিক এবং শোকাবহ। যে দুজন ভর্তি হয়েছে তাদের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন।
আহতদের অনেকেই স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন উল্লেখ করে সামন্ত লাল সেন বলেন, বগুড়া ও বার্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আহতদের যথাযথ ও সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বগুড়ায় সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।