বন্যা বিস্তৃত হয়েছে ১৮ জেলায়, জানালেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

পানিবন্দী হয়ে আছে গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯ পরিবার।

আরো তিন জেলায় বন্যা বিস্তিৃত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। রবিবার (৭ জুলাই) বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ কথা জানান তিনি। এর আগে,শনিবার (৬ জুলাই) প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে দেশের বন্যা কবলিত জেলার সংখ্যা ১৫টি।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৬১৯টি মেডিকেল টিম তৈরি করা হয়েছে।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।

সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানান ত্রান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত একনেক মিটিংয়ে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে সবাইকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী বন্যা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

মহিববুর রহমান আরো জানান, দুর্গতদের প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে, এ পর্যন্ত ১৮ জেলায় ২১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ৬৫ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার, গো-খাদ্য বাবদ ৪০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, সিলেট-৩, সুনামগঞ্জ-১ ও মৌলভীবাজার-২ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

লালমনিরহাটে বন্যার আশঙ্কা

লালমনিরহাট জেলায় তিস্তার পানি বেড়েছে। এর ফলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদী এখন বিপদ সীমা কাছাকাছি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জল প্রবাহ এখনো বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

পানির চাপ মোকাবেলায়, ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, নিজ শেখ সুন্দর, ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর এবং তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে পানি প্রবাহ বেড়েছে। শনিবার বিকাল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বেড়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি

গাইবান্ধা জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে গাইবান্ধা সদর উপজেলাসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯ পরিবার।

বন্যার পানিতে ডুবে আছে পাট, আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদ সীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।

এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদ সীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে বিপদ সীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯টি, সাঘাটার ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়ে আছে ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি বাস্তবে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি। এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুরে ঢলের তীব্রতা কমেছে

শেরপুর জেলার নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কমেছে। এর ফলে, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উজানের দিকে উন্নতি হয়েছে। তবে এই তিন উপজেলায়, নিন্মাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে কয়েকটি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

শেরপুরে তিন উপজেলায়, নিন্মাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে উজান থেকে আসা পানিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদীতে পানি বেড়েছ। এতে কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর চর ও ৭ নম্বর চর এবং চরপক্ষীমারি ইউনিয়নে কুলুরচর, বেপারীপাড়া, জঙ্গলদী ও ভাগলদী গ্রামের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানির তীব্র স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় ৬ নম্বর চরের পশ্চিম পাড়া ও মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা এবং দশানী নদীর ৭ নম্বর চর বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্রের মোহনা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কামারেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবীব জানান নদী ভাঙনের কারণে সাতটি পরিবার তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বেশকিছু ফসলি জমি নদীগর্ভে গেছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে শেরপুরের বেশ কয়েকটি নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।