‘বিএনপি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে’, জানালেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। আর, তাদের চলমান আন্দোলনের প্রতি বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানী ঢাকার গুলশানে, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার 'প্রত্যয় স্কিমে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগ নাকচ করে দেন বিএনপি মহাসচিব।

“তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) যা বলছেন তা অযৌক্তিক। আন্দোলনে বিএনপির উস্কানি দেয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না এবং বিএনপি আন্দোলনকারীদের ওপর নির্ভর করছে না;” তিনি যোগ করেন।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, দায়িত্বশীল দল হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী সম্পর্কে বিএনপি অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাবে। “তারা (শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা) তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে । আর তা অব্যাহত থাকবে। আমরা কি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারি না?” প্রশ্ন করেন বিএনপি মহাসচিব।

শিক্ষকদের জন্য 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম বাতিল এবং সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে এনে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

শিক্ষকদের কর্মবিরতি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। তাদের এই কর্মসূচি এখনো অব্যাহত আছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত সমাবেশে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৯০ জন শিক্ষক প্রত্যয় পেনশন স্কিম থেকে পাবরিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দেয়ার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। এটি কিছু লোককে সুবিধা দেবে এবং কাউকে বঞ্চিত করবে।

তিনি বলেন, “এই পেনশন প্রকল্প আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং আমাদের আর্থিক বিষয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতে বাধ্য করেছে।”

তিনি বলেন, “পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এ পেশার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষকদের এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তারা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।”

এদিকে, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। এই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে নিজামুল হক ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জরুরি কর্মসূচির কারণে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি।”

“আমরা শিগগিরই তাঁর সঙ্গে কথা বলবো বলে আশা করছি। আমরা নিশ্চিত কিছু সরকারি কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা বা বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে;” আরো বলেন নিজামুল হক ভূঁইয়া।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) তৃতীয় দিনের মতো রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবারও (৬ জুন) তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগ মোড়ে সমাবেশে যোগ দেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সমাবেশে যোগ দিতে মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে বের হওয়ার সময় তাদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে গেটে তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগের সূর্যসেন হল শাখার নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের মূল মিছিলটি সূর্যসেন হলে গিয়ে তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করে।

সমাবেশে আন্দোলনকারীরা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, প্রয়োজনে রক্ত ঝরাবেন তবু তারা তাদের দাবি আদায় করবেন। এর আগে মঙ্গলবার ও বুধবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।