মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যূত্থানের পর থেকে মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের নাগাল পাওয়া কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তবে এখন জান্তা ভিপিএন বন্ধ করে দিচ্ছে তাতে বিশ্লেষকদের মতে সেন্সরশীপ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাতমাদাউ নামে পরিচিত সেখানকার সামরিক বাহিনী এখন ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএনগুলি আটকে দিচ্ছে। ভিপিএন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন জান্তা সব ব্লক কার্যকর করার জন্য হয়ত চীনা কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
টপটেনভিপিএন ‘এর গবেষণা প্রধান সাইমন মিগলিয়ানো বলেন এই পদক্ষেপ “ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা,সক্রিয়তা এবং নিজ সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে”। লন্ডন ভিত্তিক এই সংগঠনটি ভিপিএন’এর নিরাপত্তা পরীক্ষা করে দেখে এবং ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা পরীক্ষা করে দেখে।
বাধা প্রদানের ফলে তথ্যের নাগাল সীমিত হয়ে গেল
তিন বছরেরও আগে জান্তা যখন বেসামরিক সরকারের পতন ঘটায় তখন থেকেই তার ভিপিএন বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে সামারিক বাহিনী তাতমাদাউ সাইবার সিকিউরিটি আইনের খসড়া তৈরি করে কিন্তু তখন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ঐ সাইবার সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ ভিপিএন ব্যবহার করলে, শাস্তিস্বরূপ তার তিন বছরের কারাদন্ড হতে পারে।
মে মাসের শেষের দিক থেকে এই বাধা প্রদান শুরু হয় এবং তা মিয়ানমারের ইন্টারনেট স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে । যেমনটি মিগলিয়ানো বলেন সামরিক বাহিনী এবং তাদের অভূত্থানের বিরোধীতা প্রধানত সংগঠিত অনলাইনের মাধ্যমেই করা হয়।
মিগলিয়ানো ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ মিয়ানমারে ভিপিএন ‘এর উপর এই অভিযান স্বাধীন ও সঠিক তথ্যের নাগাল পেতে নাগরিকদের অধিকার কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং এতে তথ্য প্রবাহের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে”।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যসম জানিয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনী খেয়ালখুশি মতো জনগণকে থামিয়ে ভিপিএন’এর অ্যাপ আছে কীনা তা দেখার জন্য ফোন দেখছে। জুন মাসের প্রথম দিকে পুলিশ তাদের মুঠোফোনে ভিপিএন পাওয়ায় প্রায় ২৪ জনকে আটক ও জরিমানা করেছে।
তা ছাড়া সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী মিয়ানমারের পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয় ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম , এক্স এবং ওয়াটসআপকে জনগণের নাগালের বাইরে রেখেছে।
মন্তব্যের জন্য ভয়েস অফ আমেরিকার অনুরোধের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কোন সাড়া দেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ‘অ্যাক্সেস নাও’ এ মিয়ানমারের একজন বিশ্লেষক ওয়াই ফিও মিন্ট ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ তারা আসলেই বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের অপপ্রচার ছড়াতে চায়”।
বিশেষজ্ঞরা বলেন জান্তা চায় ‘ডিজিটাল ডিক্টেটরশিপ’
২০২২ সালে জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ ভিপিএন’এর বিরুদ্ধে এই অভিযানকে ‘ডিজিটাল ডিক্টেটরশীপ’ প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেন।
ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক একজন সক্রিয়বাদী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ডিজিটাল স্পেসে লড়াই চলছে”। মিয়ানমারের এই ব্যক্তি যিনি থাইল্যান্ডে চলে যান, নিরাপত্তার কারণে তাঁর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
মিয়ানমারে মুক্ত মতামত প্রকাশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অলিভার স্পেনসার বলেন ভিপিএনকে বন্ধ করতে সামরিক বাহিনী এতদিন সময় নিয়েছে তার আংশিক কারণ হচ্ছে অন্য সব ধরণের সেন্সারশীপের তূলনায় ভিপিএন বন্ধ করা কঠিন ও ব্যয়বহুল।
ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনী দেশের টেলিকমিউনিকেশান কোম্পানিগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ মজবুত করেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বন্ধ করেছে , মিডিয়া লাইসেন্স প্রত্যাহার করেছে এবং কয়েক ডজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে।
ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিপত্রের বরাত দিয়ে সক্রিয়বাদী গোষ্ঠী জাস্টিস ফর মিয়ান মার জুন মাসে জানায় যে সামরিক বাহিনীর এই বর্ধিত সেন্সরশীপ পদ্ধতিতে চীনের নেটওয়ার্ক কোম্পানি গীজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিপিএন ব্লক করতে।
এ ব্যাপারে মন্তব্য চেয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার ইমেইলের কোন জবাব দেয়নি বেইজিং ভিত্তিক এই কোম্পানি।