ব্রিটেনের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার প্রার্থীর জয়

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৪ ব্রিটিশ নাগরিকের জয়

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী, রূপা হক ও আপসানা বেগম।

শুক্রবার সকালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

প্রায় সব ফলাফল মিলিয়ে লেবার পার্টি ৬৫০ আসনের হাউস অফ কমন্সে ৪১০টি এবং কনজারভেটিভরা ১১৮টি আসনে জয়লাভ করে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে বিরোধী দলে থাকার পর লেবার পার্টির বিশাল বিজয়ের কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন কিয়ের স্টারমার।

বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে আনুষ্ঠানিকতার পর স্টারমারকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়।

লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার প্রার্থী


রুশনারা আলী

রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। লেবার পার্টির সদস্য রুশনারা আলী ২০১০ সাল থেকে তার আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

রুশনারা আলী পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাসরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট।

রূপা হক

ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাকটনের প্রতিনিধি রূপা হক পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট।

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন রূপা হক। তিনি কনজারভেটিভ প্রার্থী জেমস উইন্ডসর-ক্লাইভকে হারিয়ে ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে দাঁড়ানো অ্যালিস্টার মিটন ৬ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড এন্ড হাইগেট আসনে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ অ্যান্ড ইউনিয়নিস্ট পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন গ্রিন পার্টির লর্না জেন রাসেল। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৩০ ভোট।

সিদ্দিক ২০১৫ সাল থেকে সংসদ সদস্য।


আপসানা বেগম

আপসানা বেগম পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজ আসনে ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হন আপসানা বেগম।

আপসানা বেগম পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট।

এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছিলেন ৩৪ জন

গত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।

লেবার পার্টি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আটজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, যার মধ্যে চারজন ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পুনরায় মনোনীত হয়েছেন। তারা হলেন, রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি), রূপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন), টিউলিপ সিদ্দিক (হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন) এবং আপসানা বেগম (পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস)।

কনজারভেটিভ পার্টি দুজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, আতিক রহমান (টটেনহ্যাম, নর্থ লন্ডন) এবং সৈয়দ সাইদুজ্জামান (ইলফোর্ড সাউথ)।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয়জন প্রার্থী ব্রিটেনের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। গ্রিন পার্টি তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। এছাড়া রিফর্ম ইউকে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, সোশ্যালিস্ট পার্টি ও স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি একজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়।

১১ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সংসদ নির্বাচনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১১, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৪-তে।

এই পুনঃনির্বাচন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অব্যাহত প্রভাব এবং প্রতিনিধিত্ব তুলে ধরে।

এবারের যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, ৪ হাজার ৫১৫ জন। যুক্তরাজ্যের চলমান নির্বাচনে মোট ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।