ঘূর্ণিঝড় রিমালের বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে সুন্দরবন। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সুন্দরবন। এই বর্ষায় নতুন করে অঙ্কুরিত হচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ফিরে পাচ্ছে তার প্রকৃত রূপ।
বর্ষার প্রভাবে বন ও এর আশপাশের এলাকা ভরে গেছে সুন্দরী, গরান ও গোলপাতা-সহ নানা প্রজাতির গাছে। সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী। তবে এখানে আরো আছে, পশুরী, গেওয়া, কেওড়া, হেঁতাল আর গোলপাতায় ছাওয়া বিশাল বনভুমি।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের কারণে লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মিঠা পানির পুকুরগুলো মৌসুমি বৃষ্টির কারণে আবার মিঠা পানিতে ভরে গেছে। ফলে জলের অভাব মিটেছে এখানকার প্রাণীকূলের।
অন্যদিকে, পর্যটক, জেলে, কাঠুরে ও মধু সংগ্রহকারীদের প্রবেশ বিধি-নিষেধের কারণে, সুন্দরবনের নির্জনতা প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে সহায়তা করছে। এমন নির্জন পরিবেশ, মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজননে সহায়ক হয়েছে, নতুন উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহজ করেছে।
সুন্দরবনের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ২৬ মে রিমালের আঘাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; তা আগের ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরকে ছাড়িয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় শতাধিক মিঠা পানির পুকুর লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়, যার ফলে শতাধিক হরিণ ও বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়।
এছাড়া অসংখ্য সুন্দরী, গরান ও গোলপাতাসহ অন্যান্য উদ্ভিদ প্রজাতির গাছ ধ্বংস হয়ে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য হ্রাস পায় বলে জানান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো।
রিমালের আঘাতের পর, নতুন করে গাছপালা জন্মানো এবং মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজননে সহায়তার জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ এবং জেলে, কাঠুরে ও মধু সংগ্রহকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।
ফলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার এক মাসের মধ্যেই সুন্দরবন তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরে পেতে শুরু করেছে।বনবিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ৩৫০ প্রজাতির পাখি, ২৯০ প্রজাতির প্রাণী, ৩০-৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৮-১০ প্রজাতির উভচর এবং ২০০ প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী রয়েছে।
এদিকে, রিমাল আঘাত হানার পর বনবিভাগ জানিয়েছিলো; ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দবনে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিন সৃষ্টি হয়েছিলো। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি ২৪ ঘন্টায় দুইবার ভাটা ও দুইবার জোয়ার হওয়ার কথা থাকলেও, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বক্ষণ থেকে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় বনে কোনো ভাটা হয়নি।
বন বিভাগ জানিয়েছিলো, ঘূর্ণিঝড়ে বন বিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তবে, আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য নয়, এমন ক্ষতি হয়েছে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে, বনের শতাধিক পুকুর প্লাবিত হয়ে নোনা পানি ঢুকে পড়া। এতে সুন্দরবেনের বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, ১১ কিলোমিটার গোলপাতা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝড়ে; যার পরিমাণ র্থিক মূল্যে নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়ে যায়। ৩১ মে বিকাল পর্যন্ত বন থেকে ১১২টি হরিণ এবং ৪টি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।