প্রত্যয় পেনশন স্কিম: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের তৃতীয় দিন। ৩ জুলাই, ২০২৪।

বাংলাদেশের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রবর্তিত নতুন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) ছিল ধর্মঘটের তৃতীয় দিন।

এর আগে পেনশন স্কিম প্রত্যয় বাস্তবায়নের প্রতিবাদে সোমবার থেকে ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ বর্জনের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও।

এই কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত, সান্ধ্যকালীন প্রফেশনাল, অনলাইন ও অফলাইন প্রোগ্রামসহ সবধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

একাডেমিক কার্যক্রম ছাড়াও চেয়ারম্যান অফিস, হল প্রভোস্ট অফিস, গবেষণা কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ডিন অফিস, কম্পিউটার ল্যাব ও সেমিনার কক্ষসহ প্রশাসনিক অফিসসমূহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের সঙ্গে বসবেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধর্মঘট তৃতীয় দিনের মতো চলমান থাকা অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (ফাইল ছবি)

বুধবার (৩ জুলাই) ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে কথা বলবেন, তবে এখনো বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়নি।

আন্দোলন চলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরবেন না।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য

এর আগে, ৩০ জুন (রবিবার) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাসময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (ফাইল ছবি)

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সেশনজটে পড়লে, মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলন করছেন। সেই অধিকার তাদের আছে। অনেকে বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তো এটা বোঝা যাচ্ছে যে, তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন।”

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবে, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছে। শিক্ষকেরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে আলাদা করে কিছু করার নেই।

সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ অগাস্ট ‘প্রবাস’, ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ এবং ‘সমতা’–এই চারটি প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প যাত্রা শুরু করে।

পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রত্যয় স্কিম চালু করা হয়। এসব সংস্থায় এখন থেকে যেসব কর্মী নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা ১ জুলাই থেকে প্রত্যয় কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও সরকারি ব্যাংক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইত্যাদি সংস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যয় প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন-ব্যবস্থা চালু আছে।