জাতিসংঘ: খান ইউনিস ত্যাগের ইসরায়েলি আদেশের শিকার হাজার হাজার লোক

পূর্ব খান ইউনিসের বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে বাস্তুচ্যূত লোকেরা পালানোর পথে, জুলাই ২, ২০২৪।

গাজা ভূখন্ডের দক্ষিণাঞ্চলের এক বিরাট সংখ্যক লোককে সেই অঞ্চল ত্যাগের ইসরায়েলি আদেশে জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রক্শ করেছে। জাতিসংঘ বলছে এর ফলে হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সংবাদদাতাদের বলেন, “ গতকাল যে খান ইউনিস ও রাফার ১১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালি করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তাতে গাজা ভূখন্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যা কীনা গত অক্টোবরের আদেশের পর এটি হবে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে অন্যত্র সরে যাবার আদেশ। সেই সময়ে সেখানকার অধিবাসীদের গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের দপ্তর ইউএনআরডব্লিউএ ‘র হিসেব মতো যে সময় এই আদেশ জারি করা হয় সেই সময়ে সেখানে প্রায় আড়াই লক্ষ লোক হয়ত বাস করতেন।

দুজারিক বলেন ওই সমস্ত এলাকার লোকেরা এখন নিজেদের এমন সব এলাকায় পুনর্বাসিত করছে যেখানে “বেছে নেওয়ার কিছু নেই”, সেখানেতো কোন কোন স্থান নেই, নেই কোন পরিষেবা কিংবা সেখানেই থেকে যেতে হবে যেখানে লড়াই হবে।

তিনি বলেন নতুন যে স্থানটি ত্যাগ করতে বলা হয়েছে সেখানে ৯০ টির ও বেশি স্কুল রয়েছে , যার বেশির ভাগটিতে রয়েংছেন বাস্তুচ্যূত লোকজন । ওই অঞ্চলে রয়েছে চারটি চিকিত্সা কেন্দ্রও।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গাজা ভূখন্ডের দক্ষিণাঞ্চল খার ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন গাজাবাসীরা।জুন ৩০, ২০২৪।

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বসাম্প্রতিক নির্দেশ দেওয়ার একদিন পরই ইসরায়েল খান ইউনিসের ওপর বোমা হামলা চালায় ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতি লক্ষ্য করে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, খান ইউনিসের এমন একটি এলাকায় রাতভর তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। তাছাড়া, গাজার দক্ষিনাঞ্চলের রাফা শহরেও বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি স্থল বাহিনীও গাজার মধ্যাঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েল সাধারণত কোন সামরিক অভিযানের আগে গাজার কিছু কিছু অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে । ইসরায়েল বলে এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে যুদ্ধ থেকে অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান। এই স্থান ত্যাগ এবং লড়াই সব মিলিয়ে জনগণকে নিরাপত্তার জন্য বহুবার পালাতে হয়েছে।

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের কাছে একটি ইসরায়েলি ট্যাংক, জুলাই ২, ২০২৪।

ওই খালি করার অঞ্চলে বসবাসকারী আহমাদ নাজ্জার সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, “ ওই স্থান খালি করার আদেশের পর জনগণের মনে আশংকা এবং প্রচন্ড দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে” । তিনি দেখছেন “ বিশাল সংখ্যক লোকজন স্থানচ্যূত হচ্ছেন”।

ত্রাণ পরিস্থিতি

গাজার জন্য মানবিক ও পুনর্নিমাণ বিষয়ক জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন সমন্বয়ক সিগরিড কাগ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন যে মে মাসের শুরুতে রাফায় ইসরায়েল তার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ ও বিতরণের পরিমাণ, “ লক্ষনীয় ভাবে হ্রাস পেয়েছে”।

তিনি বলেন, “ সামরিক তৎপরতাএবং গাজার অভ্যন্তরে নিরাপদ পথের অভাবে মানব্কি কার্যক্রমকে প্রচন্ড ভাবে ব্যাহত করছে। শৃঙ্খলা প্রায় সবটাই ভেঙ্গে পড়ায় এক ধরণের বিশৃঙ্খল ও অপরাধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

গাজার জন্য মানবিক ও পুনর্নিমাণ বিষয়ক জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন সমন্বয়ক সিগরিড কাগ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তর, জুলাই ২, ২০২৪।

কাগ বলেন, জাতিসংঘ ইসরায়েলকে বলেছে নিরাপদে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটা সমাধান খুঁজে বের করতে। ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি পালন করছে না, এমন অভিযোগের সঙ্গে সে সহমত নয় এবং বলছে যে বিভিন্ন প্রবেশ পথ থেকে তারা গাজায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “ যদিও সদিচ্ছা এবং প্রতিশ্রুতি মেনে নেয়া যেতে পারে তবু্ও একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে গাজায় ফিলিস্তিনি অসামরিক নাগরিকদের জীবন ও তাদের ভাল থাকার বিষয়টি।

নিরাপত্তা পরিষদ কাগকে দ্রুত বিতরণ সহজতর করার লক্ষ্যে গাজায় মানবিক ধরণের সব সাহায্য নিশ্চিত ও নজরদারি করতে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্ব দিয়েছে । তিনি বলেছেন এটি এখন কার্যকর রয়েছে।

তিনি বলেন এই ব্যবস্থায় এখন জর্দান, সাইপ্রাস, ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর থেকে গাজায় আসা মানবিক ত্রাণের চালান দেখা হচ্ছে । কোন কোন সময়ে বড় আকারের সাহায্যের স্বচ্ছতা ও অগ্রাধিকারের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

কাগ বলেন, সাইপ্রাস থেকে সমুদ্র করিডরের মাধ্যমে দীর্ঘ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা চলছে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই ত্রাণ সরবরাহগুলি সাইপ্রাসে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং জাহাজে করে গাজায় পাঠানো হচ্ছে।

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের সূচনা হয় যখন হামাস নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে,১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে।

ও দিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় প্রায় ৩৮,০০০ লোক নিহত হয়েছেন এবং সমুদ্র তীরবর্তী জনঅধ্যূষিত ছিঁটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ভিওএ ‘র জাতিসংঘ সংবাদদাতা মার্গারেট বেশীর এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এএফপি ও রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছে।