সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি রোধে, বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, বদলি, বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরের মতো পদক্ষেপগুলো অপর্যাপ্ত প্রতিবন্ধক এবং অজান্তেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করতে পারে।
সোমবার (১ জুলাই) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরিবর্তে, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের মতো সংস্থায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বদলি বা অবসরের মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক মনে হলেও তাতে দুর্নীতির মূল কারণগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় না। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের পদক্ষেপ এমন একটি চক্রকে স্থায়ী করতে পারে, যেখানে কঠোর আইনি পরিণতির অভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না।”
তিনি সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার সংশোধনী তুলে ধরে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে।
“এ ধরনের ফাঁকফোকর আইনের দৃষ্টিতে সমতার সাংবিধানিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক;” যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি আরো বলেন যে দুর্নীতির অভিযোগে ন্যূনতম শাস্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা একটি ক্ষতিকর বার্তা দেয়।
“আর, এটি এমন ইঙ্গিত দেয় যে কিছু ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে, যা জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং নৈতিক শাসনের ভিত্তি নষ্ট করে;” ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন।
দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন ইফতেখারুজ্জামান এবং ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহবান জানান। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, প্রাতিষ্ঠানিক আঁতাত এবং দুর্নীতির বিকাশ ঘটায় এমন পদ্ধতিগত বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিতে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা জবাবদিহিতা এড়িয়ে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কার্যকরভাবে রোধ করা যাবে না।” তিনি বলেন, জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক মান বজায় রাখতে, এমন দৃঢ় পদক্ষেপ দরকার যা স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন, যা অপরাধের তীব্রতাকে প্রতিফলিত করে। যাতে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে অসদাচরণ রোধ করা যায়।