ফ্রান্সের নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে অভিবাসন-বিরোধী ন্যাশনাল র‍্যালি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে

ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলে এক ভোট কেন্দ্রের পাশে দেয়ালে উগ্র ডানপন্থী দলের মারিন লে পেন এবং জর্ডান বারদেল্লার ছবিসহ পোস্টার। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঃ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দ্বিতীয় রাউন্ডে বৃহত্তর জোটের আহবান। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

পোলিং সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, আরএন ৫৭৭ আসনের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের পর তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৯ আসন পাবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার না।

সংস্থাগুলোর হিসেবে ভিন্নতা আছে। ইপসস-এর প্রজেকশন অনুযায়ী আরএন পাবে ২৩০ থেকে ২৮০ আসন; ইফপ-এর হিসাব হচ্ছে ২০৪ থেকে ২৭০; এবং এলাব একমাত্র সংস্থা যারা এরএন-এর আসন সংখ্যা ২৬০ থেকে ৩১০ এর মধ্যে করেছে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো এক বিবৃতিতে, যে সব এলাকায় কোন প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে জয় পান নি এবং যেখানে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে, সেসব জায়গায় উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি বড় জোট গঠনের আহবান জানিয়েছেন।

বামপন্থী জোট এবং প্রেসিডেন্টের দল আশা করবে, দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা বুঝে একে ওপরের প্রার্থীকে ভোট দিলে আরএন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না।

“ফ্রান্সেকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে সাত দিন সময় আছে,” রাফায়েল গ্লুক্সমান, বামপন্থী জোটের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন।

মারিন লে পেনঃ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আশায়। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

অসাধারণ গুরুত্ববহনকারী এবং মেরুকরণের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাব সংস্থার হিসেবে ভোটের হার ছিল ৬৭.৫ শতাংশ। নিয়মিত সংসদীয় নির্বাচনে ১৯৮১ সালের পর এটাই ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি ভোটের হার।

দু’বছর আগে ২০২২ সালে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৭.৫ শতাংশ।

ম্যাক্রো বলেন, এই উঁচু ভোটের হার দেখিয়ে দিয়েছে, “আমাদের সকল দেশবাসীর জন্য এই নির্বাচন কত গুরুত্বপূর্ণ।”

যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়িয়েছে এবং জ্বালানী আর খাদ্য মূল্য অনেক উঁচুতে, তখন অভিবাসন-বিরোধী আরএন পার্টি এগিয়ে গেছে।

দুই রাউন্ডের ভোট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথমবার উগ্র ডানপন্থিদের ক্ষমতায় আনতে পারে, এবং দলের নেতা লে পনের শিষ্য ২৮-বছর বয়স্ক জর্ডান বরদেল্লাকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে।

বারদেল্লা বলেন তিনি “সকল ফরাসির প্রধানমন্ত্রী” হতে চান।

“কোন কিছু যেতা হয়নি এবং দ্বিতীয় রাউন্ডই আসল,” লে পেন সমর্থকদের বলেন। “আমাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, যাতে আট দিন পর এমানুয়েল ম্যাক্রো জর্ডান বারদেল্লাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।”

ডানপন্থি ন্যাশনাল র‍্যালি দলের নেতা ২৮-বছর বয়স্ক জর্ডান বারদেল্লার প্রধানমন্ত্রী হবা সম্ভাবনা রয়েছে। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

প্রশান্ত মহাসাগরে অশান্তি

ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের বৈদেশিক অঞ্চলগুলিতে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এরপর রবিবার সকাল ৮ টায় ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে ভোটকেন্দ্র গুলো খোলা হয়। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় প্রথম ভোট গ্রহণের ফলাফলের পূর্বাভাস এবং রবিবার রাতের শেষের দিকে আগাম আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফ্রান্সের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিউ ক্যালেডোনিয়ায় স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নিউ ক্যালেডোনিয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতায় নয়জন মারা গেছে। আশান্ত এই দ্বীপপুঞ্জে কর্তৃপক্ষ ৮ জুলাই পর্যন্ত কারফিউইয়ের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

ফ্রান্স ১৮৫৩ সালে এই অঞ্চলটি দখল করে, এবং স্থানীয় কনক আদীবাসী জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ম্যাক্রোঁর সরকারের ফরাসি সংবিধান সংশোধন ও ভোটার তালিকা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার কারণে সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

মুসলিম-বিদ্বেষী দল

জুনের শুরুতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ন্যাশনাল র‍্যালির কাছে তার দল পরাজিত হওয়ার পর ম্যাক্রোঁ আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। ন্যাশনাল র‍্যালির বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের সাথে ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা আছে এবং ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরি মনোভাব পোষণ করে।

প্রাক-নির্বাচনী জরিপগুলি ন্যাশনাল র‍্যালির সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতিতে, ম্যাক্রোঁ ক্ষমতা ভাগাভাগি করে এমন একটি ব্যবস্থায় ২৮ বছর বয়সী ন্যাশনাল র‍্যালির সভাপতি জর্ডান বারদেলাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও এর আগে ২০২৭ সালে তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে ঘোষনা করেছিলেন ম্যাক্রোঁ। ফলে নতুন এই পরিস্থিতি দেশে এবং বিদেশে তার অবস্থান দূর্বল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।