বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে সই করা সমঝোতা স্মারক জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহবান জানিয়েছে। রবিবার (৩০ জুন) এক সংবাদ সম্মেলন দলের মহাসচিব বলেন তারা চুক্তি ও স্মারকগুলো প্রত্যখ্যান করছে।
“এটা দাসত্বের নতুন সংস্করণ,” মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন। “বিএনপি এসব দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ জুন নয়াদিল্লি সফরের সময় ভারতের সঙ্গে ১০টি সমঝোতা স্মারকে সই করেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
বিএনপি মহাসচিব ভারতকে একটি রেল করিডোর প্রদান করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলপথের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অনুমতি দেয়াকে “আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী” বলে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন ভারতের সঙ্গে, তাঁর ভাষায় ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা হবে।
“ভারতকে যোগাযোগের নামে একটি করিডোর দেয়া, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেল লাইনের মাধ্যমে ভারতের এক অংশ অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করবে,” আলমগির বলেন।
“আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আমরা আবার বলতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী এসব চুক্তি জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। বিএনপি এসব দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করে,” তিনি বলেন।
হাছান মাহমুদ বললেন, চুক্তি হয়নি
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে কোনো চুক্তি সই হয়নি, অথচ বিএনপি নেতারা এর সমালোচনা করছেন।
“প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, আর কিছু নবায়ন করা হয়েছে। কোনো চুক্তি সই হয়নি। আর সমস্ত সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে;” আরো বলেন হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তারা কানেক্টিভিটির মর্ম অনুধাবন করতে পারছেন না।
তিনি জানান, ভারতের বুকের ওপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ, ভুটানের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে।
“এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে কানেক্টিভিটিকে আমরা আরো বাড়াতে চাই। নেপাল ও ভুটানকে যুক্ত করতে চাই। কিন্তু বিএনপি তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে;” তিনি আরো জানান।
ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ জুন) দুই দিনের সফরে নয়াদিল্লি যান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই সফরকালে, বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে, ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এর মধ্যে রয়েছে; ব্লু ইকোনমি, সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা, মৎস্য, দুর্যোগ ও স্বাস্থ্য, মহাকাশ ও সামরিক শিক্ষা।
শনিবার (২২ জুন) নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুটি অভিন্ন অংশিদারিত্ব বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিসহ পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয় এবং তিনটি পুরোনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।
নতুন সাতটির মধ্যে দুটি হলো; ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারিত্বের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।
পাঁচটি নতুন চুক্তির মধ্যে রয়েছে; বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম কো-অপারেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারত মহাসাগরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে যৌথ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ওআরআই) এবং ভারতের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
এছাড়াও রয়েছে; যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (ইন-স্পেস) ও বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। আরেকটি হলো; প্রতিরক্ষা স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতাপত্র।
তিনটি নবায়ন করা স্মারক হলো; মৎস্য খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমঝোতা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতাপত্র।