ফ্রান্সের অসাধারণ গুরুত্ববহনকারী নির্বাচনে ভোট হচ্ছে

ফ্রান্সের সংসদীয় নির্বাচনে একজন ভোটার ভোট দিচ্ছেন। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের ভোটাররা রবিবার একটি ব্যতিক্রমী সংসদীয় নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট দিতে শুরু করেছেন। এই নির্বাচনের ফলাফল নাৎসি যুগের পর প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের সরকারকে জাতীয়তাবাদী, উগ্র ডানপন্থী দলগুলির হাতে তুলে দিতে পারে।

দুই দফা নির্বাচনের ফলাফল ৭ জুলাই পাওয়া যাবে। এই ফলাফল ইউরোপীয় আর্থিক বাজার, ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা সমর্থন, ফ্রান্সের পারমাণবিক অস্ত্রাগার এবং বিশ্বব্যাপী তার সামরিক বাহিনীর পরিচালনায় প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেক ফরাসি ভোটার মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক উদ্বেগের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্ব সম্পর্কে হতাশ, যেটা তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং তাদের জীবনের সাথে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করে।

মেরিন লে পেনের অভিবাসন-বিরোধী ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টি টিকটকের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছে। সমস্ত প্রাক-নির্বাচনী জনমত জরিপে তার দলের আধিপত্য বিস্তার দেখা যাচ্ছে।

বামপন্থী একটি নতুন জোট, নিউ পপুলার ফ্রন্টও ম্যাক্রোঁ এবং তার মধ্যপন্থী জোট টুগেদার ফর দ্য রিপাবলিকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোট ৪ কোটি ৯৫ লাখ নিবন্ধিত ভোটার দুই দফা ভোটে ফ্রান্সের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৫৭৭ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবে।

ডানপন্থি ন্যাশনাল র‍্যালি দলের নেতা ২৮-বছর বয়স্ক জর্ডান বারদেল্লার প্রধানমন্ত্রী হবা সম্ভাবনা রয়েছে। ফটোঃ ৩০ জুন, ২০২৪।

প্রশান্ত মহাসাগরে অশান্তি

ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের বৈদেশিক অঞ্চলগুলিতে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এরপর রবিবার সকাল ৮ টায় ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে ভোটকেন্দ্র গুলো খোলা হয়। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় প্রথম ভোট গ্রহণের ফলাফলের পূর্বাভাস এবং রবিবার রাতের শেষের দিকে আগাম আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফ্রান্সের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিউ ক্যালেডোনিয়ায় স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নিউ ক্যালেডোনিয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতায় নয়জন মারা গেছে। আশান্ত এই দ্বীপপুঞ্জে কর্তৃপক্ষ ৮ জুলাই পর্যন্ত কারফিউইয়ের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

ফ্রান্স ১৮৫৩ সালে এই অঞ্চলটি দখল করে, এবং স্থানীয় কনক আদীবাসী জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ম্যাক্রোঁর সরকারের ফরাসি সংবিধান সংশোধন ও ভোটার তালিকা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার কারণে সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

মুসলিম-বিদ্বেষী দল

জুনের শুরুতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ন্যাশনাল র‍্যালির কাছে তার দল পরাজিত হওয়ার পর ম্যাক্রোঁ আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। ন্যাশনাল র‍্যালির বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের সাথে ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা আছে এবং ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরি মনোভাব পোষণ করে।

প্রাক-নির্বাচনী জরিপগুলি ন্যাশনাল র‍্যালির সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতিতে, ম্যাক্রোঁ ক্ষমতা ভাগাভাগি করে এমন একটি ব্যবস্থায় ২৮ বছর বয়সী ন্যাশনাল র‍্যালির সভাপতি জর্ডান বারদেলাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও এর আগে ২০২৭ সালে তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে ঘোষনা করেছিলেন ম্যাক্রোঁ। ফলে নতুন এই পরিস্থিতি দেশে এবং বিদেশে তার অবস্থান দূর্বল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।