বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে কোনো চুক্তি সই হয়নি, অথচ বিএনপি নেতারা এর সমালোচনা করছেন।
“প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, আর কিছু নবায়ন করা হয়েছে। কোনো চুক্তি সই হয়নি। আর সমস্ত সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে;” আরো বলেন হাছান মাহমুদ।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব, ড. মঈন খান এবং আরো অনেক বিএনপি নেতা শিক্ষিত। কিন্তু চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। “তারা কেনো অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন তা আমার বোধগম্য নয়;” তিনি যোগ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তারা কানেক্টিভিটির মর্ম অনুধাবন করতে পারছেন না। “কোনো কোনো পীর সাহেবও দেখছি লাফাচ্ছেন। অথচ গাজায় প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে লাফাতে দেখি না। বিএনপি আর জামায়াতও এ নিয়ে একটি শব্দ বলেনি;” বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি জানান, ভারতের বুকের ওপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ, ভুটানের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। “এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে কানেক্টিভিটিকে আমরা আরো বাড়াতে চাই। নেপাল ও ভুটানকে যুক্ত করতে চাই। কিন্তু বিএনপি তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে;” তিনি আরো জানান।
প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে ১০টি চুক্তি সই হয়েছে, যার মধ্যে দুটি চুক্তি, ৫টি নতুন এমওইউ এবং তিনটি নবায়নকৃত চুক্তি রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, চুক্তিগুলোর কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।”
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
রবিবার (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।”
তিনি বলেন, “অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি সই করেছেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, এগুলো মূলত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)।”
“এর আগে বলা হয়েছিলো যে ভারত আরো চুক্তি সই করবে এবং ভারতে প্রযুক্তিগত দল পাঠানো হবে। কিন্তু, আমাদের সমস্যা সমাধানে কোনো চুক্তি সই হয়নি। আমরা তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না, আর, এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি;” যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “তারা (সরকার) ভারতের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েছে।”
ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি ও সমঝোতা
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ জুন) দুই দিনের সফরে নয়াদিল্লি যান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার এই সফরকালে, বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে, ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এর মধ্যে রয়েছে; ব্লু ইকোনমি, সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা, মৎস্য, দুর্যোগ ও স্বাস্থ্য, মহাকাশ ও সামরিক শিক্ষা।
শনিবার (২২ জুন) নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুটি অভিন্ন অংশিদারিত্ব বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিসহ পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয় এবং তিনটি পুরোনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।
নতুন সাতটির মধ্যে দুটি হলো; ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারিত্বের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।
পাঁচটি নতুন চুক্তির মধ্যে রয়েছে; বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম কো-অপারেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারত মহাসাগরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে যৌথ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ওআরআই) এবং ভারতের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
এছাড়াও রয়েছে; ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক; যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (ইন-স্পেস) ও বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। আরেকটি হলো; প্রতিরক্ষা স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতাপত্র।
তিনটি নবায়ন করা স্মারক হলো; মৎস্য খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমঝোতা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতাপত্র।