খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কর্মী-সমর্থক।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে, রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করেছে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা
শনিবার (২৯ জুন) দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। এই সমাবেশে যোগ দেয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন সমূহের শত শত কর্মী-সমর্থক।

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা। এসময় তারা শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমাবেশ পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

এর আগে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে, নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত বুধবার সারাদেশে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১ জুলাই বাংলাদেশের সব মহানগরে এবং ৩ জুলাই সব জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি।

গত ২২ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরদিন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল সফলভাবে তার বুকে পেসমেকার স্থাপন করে। খালেদা জিয়া এখন হাসপাতালের সিসিইউ সুবিধাসহ একটি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

২০২২ সালের ১১ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে সেই বছরই আরেকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার।

২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেটে ও বুকে পানি জমা ও লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।