ইরানে ভোটদানের সময়সীমা বৃদ্ধি; অধিক ভোটার অংশগ্রহণের আহ্বান জানালেন সর্বোচ্চ নেতা

তেহরানে এক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন ইরানের এক নাগরিক। ফটোঃ ২৮ জুন, ২০২৪। (রয়টার্স মারফত ওয়েস্ট এশিয়া সংবাদ সংস্থা)

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ইরানের নাগরিকরা শুক্রবার ভোট দিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান গণ-অসন্তোষ ও পশ্চিমা চাপের আবহে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত চারজন প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন। চার প্রার্থীই সে দেশের সর্বোচ্চ নেতার অনুগত।

গাজার হামাস ও লেবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী ইরানের মিত্র। এই গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ইসরায়লের যুদ্ধের কারণে আঞ্চলিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ইরান পরমাণু কর্মসূচিতে দ্রুত অগ্রসর হওয়ায় তাদের উপর পশ্চিমা দেশগুলির চাপ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এই নির্বাচন ইরানের নীতিতে তেমন বড় কোনও বদল আনবে, এমন সম্ভাবনা নেই। এর ফলাফল আয়াতোল্লাহ আলি খামেইনির উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। উল্লেখ্য, ইরানের ৮৫ বছর বয়সী এই শীর্ষ নেতা ১৯৮৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন।

খামেইনি ভোটদানের পর দেশের সরকারি টেলিভিশনে বলেন, “ইসলামিক রিপাবলিকের স্থায়ীত্ব, শক্তি, মর্যাদা ও সম্মান নির্ভর করছে জনগণের উপস্থিতির উপর। বেশি সংখ্যক ভোটদান একান্ত জরুরি।”

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বা মধ্যপ্রাচ্যে মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিকে সাহায্য করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড়সড় রদবদল নিয়ে আসবেন আগামী প্রেসিডেন্ট, এমন কোনও প্রত্যাশা নেই; কারণ সে দেশের প্রধান বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করেন খামেইনি।

তবে প্রেসিডেন্ট দৈনন্দিন সরকার চালাবেন এবং ইরানের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র নীতির ধরণ কেমন হবে তা প্রভাবিত করতে পারেন তিনি।

তিনজন প্রার্থী অতি-রক্ষণশীল ও চরমপন্থী। একজন স্বল্প পরিচিত ও তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী। তাকে সাহায্য করছে সংস্কারপন্থী অংশ। যদিও গত কয়েক বছরে ইরানের এই অংশকে ব্যাপকভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে।

ইরানের ধর্মীয় শাসনের সমালোচকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ভোটদানের হার কম। এ থেকে আন্দাজ করা যায়, দেশের সরকারের বৈধতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ভোটারদের মাত্র ৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং মার্চ মাসে আয়োজিত সংসদীয় নির্বাচনে এই অনুপাত ৪১ শতাংশে নেমে এসেছিল যা কার্যত একটা রেকর্ড।

একমাত্র তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের ধর্মীয় শাসনের প্রতি অনুগত হলেও পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে বৈরিতার অবসান চান; সেই সঙ্গে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার, সামাজিক উদারীকরণ ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদের পক্ষে কথা বলেন।

পেজেশকিয়ান ভোটদানের পর বলেন, “আমরা হিজাব আইনকে সম্মান করব, তবে নারীদের প্রতি কোনও হস্তক্ষেপ বা অমানবিক আচরণ করা কখনও উচিত নয়।”