আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) টুর্নামেন্ট ফেভারিট ভারত বর্তমান শিরোপাধারী ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত ফাইনালে পৌঁছেছে।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ইংল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ১০৩ রান করে সবাই আউট হয়ে যান।
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার অর্ধশতক এবং সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের ৪৭ ভারতেকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ইনিংস গড়তে সহায়তা করে। ক্রিস জর্ডান ৩টি উইকেট নিলেও তিনি তিন ওভারে রান দেন ৩৭। ইংল্যান্ডের দুই স্পিনার, আদিল রাশিদ (১-২৫) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (০-২৪) ভারতের ব্যাটিং-এ রাশ টেনে রাখে।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেও গায়ানার মাঠে স্পিনারদের গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে যায়। আক্সার প্যাটেল তার প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৪ রানে তিন উইকেট দখল করেন। অপর স্পিনার কুলদীপ ইয়াদাভ টানা চার ওভার বল করে ১৯ রানে তিন উইকেট তুলে নেন।
ইংল্যান্ডের জস বাটলার (২৩) আর হ্যারি ব্রুক (২৫) ছাড়া আর কোন ব্যাটার ইনিংসে ভূমিকা রাখতে পারেনি। পেস বোলার জফ্রি আরচারের ২১ রান আসে অনেক দেরিতে, যখন ম্যাচ ইংল্যান্ডের নাগালের অনেক বাইরে চলে গেছে।
রোহিত শর্মার ইনিংস
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম মাঠের আউটফিএল্ড ভেজা থাকায় খেলা এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। টসে জিতে ইংল্যান্ড প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং শুরুতেই ভারতের উদ্বোধনী জুটি রোহিত শর্মা এবং ভিরাট কোহলি প্রথম দু’ওভার আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করেন।
কিন্তু তৃতীয় ওভারে একটি ছয় হাঁকানোর এক বল পরেই রিস টপলি কোহলির উইকেট ফেলে দেন। তবে শর্মা এই ধাক্কায় দমে না গিয়ে বল মাঠের চতুর্দিকে পাঠাতে শুরু করেন।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে স্যাম কারান ঋসভ পান্তের ইউকেট নিলে ইংল্যান্ড ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখতে পায়। কিন্তু সম্প্রতি ফর্মে ফেরা শর্মা এবং আইসিসির টি২০ ব্যাটিং র্যাঙ্কিং-এর দ্বিতীয় ব্যাটার সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ আবার প্রমাণ করলেন কেন তাদেরকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এত বিপজ্জনক ব্যাটার হিসেবে দেখা হয়।
আদিল রশিদের বলে বোল্ড হবার আগে শর্মা দুটি ছয় আর ছয়টি চারের সাহায্যে ৩৯ বলে ৫৭ রান সংগ্রহ করেন। শর্মা এবং ইয়াদাভ তৃতীয় উইকেটে ৫০ বল খেলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন।
তবে ইয়াদাভ (৪৭) তার হালফ সেঞ্চুরি সম্পন্ন করার আগেই জফ্রি আরচারের বলে ক্রিস জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন।
নতুন ব্যাটার হার্দিক পান্ডিয়া ভারতীয় ইনিংসের গতি বজায় রাখতে ১৩ বলের এক মারমুখী ইনিংস খেলে ২৩ রান তুলে নেন।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিপর্যয়
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-এর শুরুটা তাদের জন্য আশাব্যাঞ্জক হলেও, বিপর্যয় নেমে আসে পাওয়ার প্লের শেষের দিকে।
প্রথমে অধিনায়ক এবং দলের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটার জস বাটলার ১৫ বলে ২৩ রান হাঁকানোর পর আক্সার প্যাটেলের স্পিন রিভার্স-সুইপ করতে গেলে উইকেট-কিপার পান্তের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন।
পঞ্চম ওভারে জাস্প্রিত বুম্রাহ ফিল স্লটের উইকেট ফেলে দেন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে প্যাটেল নতুন ব্যাটার জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করেন। ছয় ওভার শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় তিন উইকেটে ৩৯ রান।
ইংল্যান্ডের চার বিগ হিটার – বাটলার, স্লট, বেয়ারস্টো, মঈন আলী – সবাই অল্প রানে ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে। ইংল্যান্ডের ইনিংসের সকল পর্যায়ে ভারত ছিল চালকের আসনে।
ইংল্যান্ডের ক্ষীণ আশা – যেটা বাটলার আউট হবার পর থেকেই ক্ষীণতর হচ্ছিল – একেবারেই অদৃশ্য হয় ব্রুকের বিদায়ের সাথে। পরিকল্পনাবিহীন, উদ্দেশ্যবিহীন ব্যাটিং এতই অগোছালো এক গ্রামীণ ক্রিকেটের রূপ নেয় যে এর মধ্যে দুজন রান আউটও হয়ে যান।
ইংল্যান্ডের পরাজয়ের ধরন দেখে তাকে ‘শোচনীয়’ বললে কোন ভুল হবে না।