যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের জনগণ, নিজ নিজ অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রচার অব্যাহত রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “ উন্নয়ন অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।”
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮তম স্বাধীনতা দিবস (০৪ জুলাই) উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। “একসঙ্গে আমরা আমাদের জনগণ, নিজ নিজ অঞ্চল ও এর বাইরেও শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রচার অব্যাহত রাখতে পারি;” আরো বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের যাত্রায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট উন্নত দেশ গড়ার অভিযাত্রা পূরণে, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।
হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার নতুন অঙ্গীকারের প্রশংসা করে। চলতি বছর নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার চিঠিতে যা ব্যক্ত করেছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রতিফলন।
হাছান মাহমুদ উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের বাণিজ্য বেড়েছে।২০২২ সালে বাণিজ্যের আকার ১,৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং বিনিয়োগ ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশি পণ্যের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের এফডিআইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হলো যুক্তরাষ্ট্র।”
হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন বড় আকার ধারণ করছে। সাত বছর ধরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায়, বাংলাদেশের সম্পদের ব্যাপক অপচয় হচ্ছে এবং দেশের জন্য বহুমুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
“সৌভাগ্যক্রমে এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের মানবিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় অংশীদার হয়েছে। এই দীর্ঘায়িত সংকটের অবসানে, আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক বন্ধুদের অব্যাহত ও নবায়নযোগ্য সমর্থন চাই;” হাছান মাহমুদ যোগ করেন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে কম দূষণকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। সামান্য কার্বন নিঃসরণ ও ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ কম কার্বন নিঃসরন-এর পথ অনুসরণে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সহায়তার প্রশংসা করি এবং জ্বালানি দক্ষতা, ক্লিনটেক/গ্রিন এনার্জি, স্মার্ট গ্রিড, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২৩-৫০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরো শক্তিশালী ও গভীর সহযোগিতার প্রত্যাশায় রয়েছি।”
“আমরা যখন আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছি, আসুন আমরা মানুষে-মানুষে দৃঢ় বন্ধনকে আনন্দময় করি, যা আমাদের দেশগুলোকে আবদ্ধ করে;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।
প্রাণবন্ত বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায় যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “তারা আমাদের উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে।”
হাছান মাহমুদ আরো বলেন, “আসুন আমরা স্বাধীনতার চেতনা এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজিত স্থায়ী বন্ধুত্ব উদযাপন করি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও অনুষ্টানে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, একটি সহযোগিতা ও পারস্পরিক সম্মানের গল্প।