‘ভারতের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি’, সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৫ জুন, ২০২৪।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলোর বিরুদ্ধে বিএনপি প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২৫ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব একথা জানান।

সোমবার (২৪ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে মঙ্গলবার(২৫ জুন) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। আগামী ২৮ জুন এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে ১০টি চুক্তি সই হয়েছে, যার মধ্যে দুটি চুক্তি, ৫টি নতুন এমওইউ এবং তিনটি নবায়নকৃত চুক্তি রয়েছে। চুক্তিগুলোর কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, “বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।” বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপি সব ব্যবস্থা নেবে।”

ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

উল্লেখ্য, ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে শনিবার (২২ জুন) দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ জুন) নয়াদিল্লি যান শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার এই সফরকালে, বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে, ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এর মধ্যে রয়েছে; ব্লু ইকোনমি, সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা, মৎস্য, দুর্যোগ ও স্বাস্থ্য, মহাকাশ ও সামরিক শিক্ষা।

শনিবার (২২ জুন) নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুটি অভিন্ন অংশিদারিত্ব বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিসহ পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয় এবং তিনটি পুরোনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।

নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২২ জুন, ২০২৪।

নতুন সাতটির মধ্যে দুটি হলো; ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারিত্বের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।

পাঁচটি নতুন চুক্তির মধ্যে রয়েছে; বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম কো-অপারেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারত মহাসাগরের সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে যৌথ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ওআরআই) এবং ভারতের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

এছাড়াও রয়েছে; ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক; যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (ইন-স্পেস) ও বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। আরেকটি হলো; প্রতিরক্ষা স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতাপত্র।

তিনটি নবায়ন করা স্মারক হলো; মৎস্য খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমঝোতা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতাপত্র।