বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে আওয়ামী লীগ হলো কর্মীদের দল; আর বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের নিজেদের দলেই গণতন্ত্র নেই, আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মধ্যরাতে পদায়ন।
সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় একথা বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের দল নয়, কর্মীদের দল। এই দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আছে। এখানেই অন্য দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। সে কারণে যখনই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সাধারণ কর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
“বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, তবে তাদের দলে গণতন্ত্র নেই, দলটির জন্মটাই অগণতান্ত্রিক;” যোগ করেন তিনি। আরো বলেন, “বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে, সেখানে সিদ্ধান্ত আসে দেশের বাইরে থেকে, পদায়ন-মনোনয়ন হয় রাতের আঁধারে।”
“পত্রিকায় 'মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি' শিরোনাম হয়, আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্নার ছবি ছাপা হয়। যদিও তারা বলে, মির্জা ফখরুল সাহেবের কান্না বেগম জিয়ার অসুস্থতার জন্য। কিন্তু, আমরা জানি, বেগম জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ;” আরো বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
হাছান মাহমুদ উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের পথচলায় যে সব নেতা বেসুরে কথা বলেছেন, দল ছেড়ে চলে গেছেন, তারা রাজনীতি থেকেও হারিয়ে গেছেন। “এটিই রাজনীতির শিক্ষা” আরো বলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেন হাছান মাহমুদ। বলেন, শেখ হাসিনা সেই দ্বিধাবিভক্তি থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করে সুসংহত করেছেন। গত ৪৩ বছর ধরে দলকে অসামান্য নেতৃত্ব দিয়ে পাঁচবার রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন।
দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে কাউকে যেন 'ইনোসেন্ট ভিক্টিম' বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, “অবশ্যই গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হবে। আমাদের সরকারের নীতি হলো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তবে, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে যদি ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে তা ষড়যন্ত্রের অংশ। ইনভেস্টিগেশনের আগেই গণমাধ্যমের সামনে কাউকে দুর্নীতিবাজ বলা সমীচীন নয়।”
বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে রদবদল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৩৯ পদে রদবদল করা হয়েছে। শনিবার (১৫ জুন) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সাংগঠনিক কাজ-কর্মে গতি সঞ্চার করতে এই রদবদল করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার(১৩ জুন) রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আর, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হয়।
শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের সেক্রেটারি (বিশেষ দায়িত্ব) ড. আসাদুজ্জামান রিপন-কে ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন-কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও লায়ন আসলাম চৌধুরী-কে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়া, রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু (রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক), সাখাওয়াত হাসান জীবন (সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক), বেবী নাজনীন (সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক) ও ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন চৌধুরীকে (সহকারী আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে।
এছাড়া, ঢাকা বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলকে সাংগঠনিক সম্পাদক, রাজশাহী বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেককে সাংগঠনিক সম্পাদক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে গাউচকে সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
এদিকে, যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে বিএনপির প্রচার সম্পাদক, সহকারী প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে গণশিক্ষা সম্পাদক, সহকারী প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমকে গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, সহকারী প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে রাজশাহী বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক পদে উন্নীত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সহকারী আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে ঢাকা বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে রংপুর বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনকে চট্টগ্রাম বিভাগ সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক, আবু ওয়াহাব আকন্দকে ময়মনসিংহ বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মিফতাহ সিদ্দিকীকে সিলেট বিভাগের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার সভাপতি নাহিদ খানকে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহকে সহকারী স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং এসএম সাইফ আলী-কে সহকারী তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন।
বিএনপির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাইদুল হক সাঈদ, সহকারী কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক ও সহকারী আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক এসএম গালিবকে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছেন, বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, সুইডেনের মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু, ডেনমার্কের গাজী মনির ও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান।
ছয় নতুন মুখ
এদিকে, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদে ১ জন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে ৫ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছ। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী জানান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোঃ শরীফ উদ্দীনকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। আর, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে নতুন যাদের যুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন; জাহান পান্না (রাজশাহী), নাজমুন নাহার বেবী (চাঁদপুর), মো. মাইনুল ইসলাম (টাঙ্গাইল), আজম খান (দক্ষিণ আফ্রিকা), বেলায়েত হোসেন মৃধা (নরসিংদী)।