‘খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ হাস্যকর; বললেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে যারা অভিযোগ করছেন, তারা নিজেদের ‘হাস্যকর বস্তুতে’ পরিণত করছেন।সোমবার (২৪ জুন) সচিবালয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

“খালেদা জিয়ার কয়েকটা অসুখ, যেগুলো সেরে ওঠার মতো নয়। বরং চিকিৎসা করে সেগুলো কমিয়ে রাখতে যা করা দরকার, সেটা করা হচ্ছে;” আনিসুল হক আরেো বলেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি হাসপাতালে আছেন এবং চিকিৎসা পাচ্ছেন বলেই এখন পর্যন্ত তিনি সুস্থ আছেন। রবিবার (২৩ জুন) বিকাল ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার লাগানো হয়েছে এবং তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে; এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “যারা বলছেন, তাদের ভারসাম্য সঠিক আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। তাদের ভারসাম্য নেই বলেই তারা এসব কথা বলছেন।”

“আমার প্রতি তারা যদি সংবাদ সম্মেলন করে রাগ প্রকাশ করতে চান, সেটা করতে পারেন। কিন্তু তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না এই আশা করবো;” বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

‘খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেনা’, দাবি মির্জা ফখরুলের

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারায় এখন মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার (২৩ জুন) দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে একথা বলেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।

“এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের নেতা খালেদা জিয়া বিদেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিতে পেরে মৃত্যুশয্যায় সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন;” যোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে, সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে বাড়িতে থাকতে দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ও বন্দী রয়েছেন।

মির্জা ফখরুল জানান, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। বারবার জানানো হলেও, সরকার কর্ণপাত করেনি এবং চিকিৎসাসেবা দেয়নি। পরে যখন কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়োকে হাসপাতালে পাঠায়, সেখানে তার কোনো সুচিকিৎসা হয়নি; মির্জা ফখরুল আরো বলেন।

তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে গুলশানে তার বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে এই শর্তে যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং অবশ্যই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন

এদিকে, রবিবার (২৩ জুন) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে। হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা কমাতে পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, রবিবার (২৩ জুন) রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সফলভাবে খালেদা জিয়ার বুকে পেসমেকার বসিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ম্যাডামের বুকে পেসমেকার বসানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।” আগামী ৭২ ঘণ্টা খালেদা জিয়াকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

এর আগে, রবিবার বিকালে খালেদা জিয়ার পেসমেকার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন চিকিৎসকরা। জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার হার্টে ব্লকেজ সমস্যা ছিলো। “পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিক্যাল বোর্ড তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে;” তিনি আরো জানান।

উল্লেখ্য,শনিবার (২২ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, যেখানে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়।

দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, ফুসফুস, হার্ট এবং চোখের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বারবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০২১ সালের নভেম্বরে তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকে চিকিৎসকরা বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিআইপিএস পদ্ধতি) নামে পরিচিত হেপাটিক চিকিৎসা প্রদান করেন।

এর আগে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এরপর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে, একই বছর আরেকটি দুর্নীতির মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে, সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাজা স্থগিত করে, একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। শর্তের মধ্যে রয়েছে, তিনি তার গুলশানের বাড়িতে থাকবেন এবং দেশ ছেড়ে যাবেন না।