নেতানিয়াহু অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে 'আশাবাদী', গাজা নিয়ে আলোচনার জন্য গালান্ট ওয়াশিংটনে

Israel Palestinians

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন গাজায় হামাস বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে অস্ত্র চালানের গতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ শীঘ্রই সমাধান করা হবে।

তিনি মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে বলেন, "প্রায় চার মাস আগে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরায়েলে আসা অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। আমরা সব ধরণের ব্যাখ্যা পেয়েছি, কিন্তু... মৌলিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।"

তিনি বলেন, "গত দিন আমি যা শুনেছি তার আলোকে, আমি আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান হবে।"

অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছেন।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্যালান্টের কার্যালয় বলে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে "এ অঞ্চলে ইসরায়েলের গুণগত অগ্রগতি বজায় রাখার" বিষয়ে আলোচনা করবেন কিন্তু অস্ত্রের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করেননি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট। ফাইল ফটোঃ ২০ মে, ২০২৪।

গাজা আর লেবানন নিয়ে আলোচনা

গাজা যুদ্ধের পরবর্তী অধ্যায় এবং লেবানন সীমান্তে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওভ গালান্ট রবিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লেবানন সীমান্তে হেযবুলালহ’র সাথে গোলা বিনিময়ের ঘটনা বড় যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

আট মাস আগে গাজায় যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ইরান-সমর্থিত হেযবুল্লাহ ইসরায়েলের সাথে গুলি বিনিময় করছে। লেবানিজ গোষ্ঠী বলছে, গাজায় যুদ্ধ বিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না।

“গাজা, লেবানন এবং আরও এলাকায় যে পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে, তা নিতে আমরা প্রস্তুত,” গালানট ওয়াশিংটন যাবার আগে এক বিবৃতিতে বলেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে দেখা করবেন।

জুনের আগের দিকে এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন সিনিয়র হেযবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হবা পর হেযবুল্লাহ ইসরায়েলের কয়েকটি শহর এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়।

সীমান্তের দুপার থেকে গোলাগুলি এবং গরম বক্তৃতাবাজীর মাঝে উত্তেজনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দূত এমস হখস্টিন গত সপ্তাহে ইসরায়েল এবং লেবানন সফর করেন।

কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তা গাজার দক্ষিনে রাফায় ইসরায়েলি অভিযানের সাথে লেবাননের দিকে সম্ভাব্য দৃষ্টি দেবার বিষয় একসাথে মিলিয়ে দেখছেন। ইসরায়েল বলছে রাফায় তারা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের শেষ কয়েকটি ব্যাটালিয়নকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে।

গালান্টও তার বিবৃতিতে একই যোগসূত্র স্থাপন করেন।

“গাজায় তৃতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করবো। আমি জানি এ’বিষয়য়েও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা পাবো,” গালান্ট বলেন।

ইসরায়েলি সেনা বাহিনীর বিতরণ করা ছবিতে গাজার রাফায় একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্ককে লড়াই-এ অংশ নিয়ে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ২৩ জুন, ২০২৪।

অস্ত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে বলেন, তারা নেতানিয়াহুর দাবিতে বিভ্রান্ত হয়েছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, তারা দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের জন্য তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষদের "সর্বোচ্চ স্তরে... সব স্তরে" তদবির করেছে। নেতানিয়াহু বলেন, "এই পরিস্থিতিতে কয়েক মাস পরেও কোন পরিবর্তন না হওয়ায় আমি এ বিষয়ে একটি প্রকাশ্য অভিব্যক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এ বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ হয় ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেন যে তারা নেতানিয়াহু কী বলছেন সে বিষয়ে অবগত নন।

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হল ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। গাজা সংঘাত এখন এর নবম মাসে গড়িয়েছে, যা অচিরেই শেষ হবে বলে মনে হয় না।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ বিরতি এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি রূপরেখা দিয়েছেন, যেটাকে তিনি ইসরায়েলের প্রস্তাব হিসেবে বর্ণনা করেন। হামাস বলেছে, যে কোনো চুক্তির ফলাফল হিসেবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে, যে দাবি ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বজায় রাখলেও নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরিচালনায় দেশটি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছে। এ যুদ্ধটি ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের একটি অতর্কিত আক্রমণের ফলে শুরু হয়। এতে ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জন জিম্মিকে বন্দী করা হয়।

গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ৩৭,০০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক কিন্তু সাথে হাজার হাজার যোদ্ধাও আছে।

ইসরায়েলের অস্তিত্বের যুদ্ধে'

দেশটির প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেন, ইসরায়েলের "অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধে" আমেরিকার অস্ত্র প্রয়োজন। তারা গাজায় হামাস বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করছে এবং তার উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনিময় করছে।

নেতানিয়াহু রবিবার মন্ত্রিসভায় তার মন্তব্যে কোথাও উল্লেখ করেননি যে যুক্তরাষ্ট্র কোন অস্ত্রগুলোর চালান তিনি মনে করেন কমিয়ে এনেছে। তিনি কেবল বলেন, "কিছু জিনিস বিক্ষিপ্তভাবে এসেছে কিন্তু যুদ্ধোপকরণগুলি এখনও আসেনি।"

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে মে মাস থেকে কিছু ভারী বোমা সরবরাহ করতে বিলম্ব করেন। কিন্তু, অন্যান্য চালানগুলিও এতে প্রভাবিত হয়েছে বলে নেতানিয়াহু যে অভিযোগ করেছেন, বাইডেন প্রশাসন গত সপ্তাহে তা অস্বীকার করে।

বাইডেন যখন দ্বিতীয়বার চার বছরের মেয়াদে পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তখন তিনি ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন।

প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা তাকে ইসরায়েলের প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন নেতানিয়াহুকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরে পূর্ণাঙ্গ হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। কিন্তু, রাফাতে ইসরায়েলি অভিযানের ক্রমশ বিস্তার কোন লাল রেখা বা সীমা অতিক্রম করেছে, এমন ধারনা বাইডেন প্রশাসন এড়িয়ে গিয়েছে।

বিরোধীদলীয় রিপাবলিকান সমালোচকরা বলেন, বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের প্রতি সমর্থন কমিয়ে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরায়েল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

এই প্রতিবেদনে রয়টার্স থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।