টি২০ বিশ্বকাপঃ কামিন্সের হ্যাটট্রিক আর ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার জয়

হ্যাটট্রিক হিরোঃ প্যাট কামিন্স (ডানে) মাহমুদউল্লাহ'র উইকেট নেবার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ফটোঃ ২০ জুন, ২০২৪।

আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপের সুপার ৮ পর্বে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাতে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে টাইগাররা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ডিএলএস পদ্ধতিতে পরাজিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে জয়ী হয়ে দুই পয়েন্ট সংগ্রহ করে।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান সংগ্রহ করে, যেটা ছিল এই টুর্নামেন্টে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। অস্ট্রেলিয়া তাদের বৃষ্টি-ব্যাহত ইনিংসে ১১.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান সংগ্রহ করে।

অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচারডস স্টেডিয়ামে খেলা দুবার বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হয়, এবং দ্বিতীয়বার মুশলধারে বর্ষণ হলে আম্পায়াররা ডিএলএস পদ্ধতি ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষণা করে।

ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টারন বা ডিএলএস পদ্ধতিতে ইনিংসের এই পর্যায়ে যত রান প্রয়োজন ছিল, অস্ট্রেলিয়া তার চেয়ে ২৮ রান বেশি সংগ্রহ করে।

কামিন্স আর ওয়ারনার

বৃষ্টির কারণে খেলা নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হবার আগে প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক এবং ডেভিড ওয়ারনারের হাফ সেঞ্চুরি মাঠে প্রাণ সঞ্চার করে।

বাংলাদেশ তাদের ইনিংসের শেষ কয়েক ওভারে আরো কিছু রান যোগ দেবার আশা করছিল, যখন তরুণ ব্যাটার তৌহিদ হৃদয় এবং অভিজ্ঞ প্লেয়ার মাহমুদউল্লাহ জুটি বাঁধেন। ঠিক যখন মনে হল বাংলাদেশ হাত খুলে ব্যাট করে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্কোর গড়ে তুলবে, তখনই অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স হ্যাটট্রিক করে বসেন।

ম্যাচের ১৮তম ওভারে কামিন্সের পঞ্চম বল মাহমুদউল্লাহ পুল করার চেষ্টা করলে বলটা টেনে নিজের স্ট্যাম্পের উপর ফেলেন। নতুন ব্যাটার মেহদি হাসান কামিন্সের উঁচু বল আপার কাট দিয়ে বাউন্ডারির দিকে পাঠানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ডিপ থার্ডম্যান অ্যাডাম যামপা সহজেই ক্যাচ ধরে ফেলেন। ওভার শেষ।

খেলার শেষ ওভারের প্রথম বলে কামিন্স তৌহিদ হৃদয়ের উইকেট তুলে নেন, এবং মাত্র দ্বিতীয় অস্ট্রেলীয় হিসেবে টি২০ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক অর্জন করেন।

বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অস্ট্রেলিয়ার উইকেট-কিপার ম্যাথিউ ওয়েড-এর পাশ দিয়ে বল ঠেলে দিয়েছেন। ফটোঃ ২০ জুন, ২০২৪।

নাজমুল শান্তর রান

অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায় এবং মিচেল স্টারক-এর প্রথম ওভারেই তার সুফল পায়। ওভারের তৃতীয় বলে তানজিদ হাসান তামিম ব্যাকফুটে খেলার চেষ্টা করলে বল তার ব্যাট এবং প্যাডের মধ্য দিয়ে স্টাম্প তছনছ করে দেয়।

অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত এবং লিটন দাস সতর্কতার সাথে ব্যাট করে ৫৪ বলে ৫৮ রান যোগ করেন। কিন্তু লেগ স্পিনার যামপার বলে দাস বোল্ড হলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রিশাদ হোসেন চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন।

কিন্তু হোসেনকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে দিয়ে কোন লাভ হয়ে নি। মাত্র চার বল ক্রিজে থেকে হোসেন দুই রান করে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ধরা পড়েন। শান্ত একটা বড় স্কোর গড়ার লক্ষ্যে ব্যাট করছিলেন, কিন্তু ৩৬ বলে ৪১ রান সংগ্রহ করার পর যামপার বলে এলবিডব্লিউ হন।

আরেকটি মাঝারি স্কোর আসে হৃদয়ের ব্যাট থেকে – দুটি ছয় আর দুটি চারের সাহায্যে তিনি মাত্র ২৮ বলে ৪০ রান হাঁকান। ইনিংসের শেষে তাসকিন আহমেদ ১৩টি অমূল্য রান যোগ দেন।

অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ারনার ছয় হাঁকিয়ে তার হাফ সেঞ্চুরি সম্পন্ন করছেন। ফটোঃ ২০ জুন, ২০২৪।

স্পিনার দিয়ে বাংলাদেশের শুরু

অস্ট্রেলিয়ার বিগ হিটার ডেভিড ওয়ারনার এবং ট্রাভিস হেড-এর রাশ টেনে ধরার জন্য বাংলাদেশের প্রথম ওভার বল করেন অফ-স্পিনার মেহদি হাসান। দ্বিতীয় ওভারে আসেন তানজিম হাসান সাকিব এবং প্রথম বলেই ওয়ারনার ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে – কিন্তু প্রচণ্ড বেগে আসা বল ফিল্ডারের হাত থেকে বেরিয়ে যায়।

পঞ্চম ওভারে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ফিজের প্রথম ওভার অস্ট্রেলিয়ান উদ্বোধনী জুটির রান রেট কমাতে পারে নি – অজিদের খাতায় যোগ হয় ১৩টি রান। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা তখন ওভারে প্রায় ১০ রান তুলছে এবং প্রথম ছয় ওভারে দলের স্কোর দাঁড়ায় কোন উইকেট না হারিয়ে ৫৯ রান।

ষষ্ঠ ওভারের মাঝখানে বৃষ্টির কারণে খেলায় একটা বিরতি আসে। আধা ঘণ্টার কম সময় পর খেলা আবার শুরু হলে মনে হয় বৃষ্টির হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছে। রিশাদ হোসেন বিরতির পর তার প্রথম বলে ট্র্যাভিস হেডকে বোল্ড করেন।

হোসেন তার দ্বিতীয় ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন মিচেল মারশকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন। হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া কিছুটা অস্তিত্বে পরে। বাংলাদেশের দুই স্পিনার দুই প্রান্ত থেকে বল করায় ব্যাটারদের উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কিন্তু চাপ উৎরানোর রাস্তা অজিদের জানা আছে। বৃষ্টির জন্য খেলা পুনরায় ব্যাহত হবার আগে নতুন ব্যাটার ম্যাক্সওয়েল দ্রুত ১৪ রান তুলে নেন, আর উদ্বোধনী ব্যাটার ওয়ারনার তাসকিন আহমেদকে বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে ৩৪ বলে অর্ধশতক সম্পন্ন করেন।

মাঠের মাঝে উইকেট যখন আবার কাভার দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার তখন জয়ের জন্য ৪১ রান প্রয়োজন, হাতে ছিল ৮.৪ ওভার এবং ৮ উইকেট। সেই পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া ডিএলএস পদ্ধতি অনুযায়ী জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান সংগ্রহ করে ফেলেছে।