সিলেট জেলায় বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সিলেটে প্লাবিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখনো ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, মাছুদিঘীরপাড়, উপশহর, যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার এলাকা এখনো হাঁটু সমান পানিতে ডুবে আছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানির উচ্চতা কিছুটা নিচে নেমেছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কোথাও পানি কমেছে, আবার কোথাও বেড়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্ট ছাড়া অন্য নদ-নদীগুলোর পানি আগের তুলনায় নেমেছে। বন্যা পরিস্থিতির ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখছে জেলা প্রশাসন।
বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণও চলমান আছে বলে জানান তিনি।
সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী শাহিদ হাতিমী বলেন, “বেশির ভাগ এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। সিলেট শহর এলাকায় আমার বাসার আসবাবপত্রসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস পানিতে তলিয়ে গেছে।”
সিলেট নগরীর উপশহরের ডি ব্লকের বাসিন্দা আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ঈদের দিন বাসার নিচতলায় পানি চলে আসে। এখনো বাসায় পানি রয়েছে। পানি একটু কমলেও বন্দীর মতো দিনকাল যাচ্ছে।”
বুধবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সিলেটে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে মহানগরে খোলা হয়েছে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যাকবলিত। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যাকবলিত। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত এবং আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টির ওপর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। পাহাড়ি ঢল নামার ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার রাতে কোনো বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়নি। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান তিনি।