কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী অর্থনীতির চালিকাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে– সাইফুল হক

সাইফুল হক

বাংলাদেশে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা চলমান। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি কেমন হলো– এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য অংশীজনের মতামত জানতে চেয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা।

বাজেটের সার্বিক বিষয় নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার সাথে কথা বলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি মনে করেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উচ্চাভিলাষী না হলেও তা বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সক্ষমতা নেই। তাঁর মতে, বাংলাদেশের মতো দেশে প্রতিরক্ষা বাজেট সাদা হাতি পালন করার মতো একটি ব্যাপার।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রিমন।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে ইতিবাচক দুটি দিক কোনগুলো? কেন?

সাইফুল হক: ২০২৪ ও ২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের যদি ইতিবাচক দিকের কথা বলেন, সেটা হলো কিছুটা সংযত বাজেট। উচ্চাভিলাষী বলার মতো বাজেট এটা নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বাজেটের যে আকার হওয়া দরকার, এবার তার তুলনায় বরঞ্চ ছোট হয়েছে।

বাস্তবে বাজেট করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারগুলো এক ধরনের শূন্য। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অনেক ব্যাংকে ইতোমধ্যে লালবাতি জ্বলছে। ব্যাংকগুলোতে গুরুতর তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এই রকম নৈরাজ্য, অচলাবস্থা ও তারল্য সংকটের মধ্যে বাজেট করাটা যথেষ্ট কঠিন। অর্থমন্ত্রী সেই সাহস করেছেন, এটা নিশ্চয় ভালো উদ্যোগ।

এই রকম দুর্দিনে, রাজস্ব বাজেটের আকার সবচেয়ে বেশি। সরকারের নিজের ব্যয়ের বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি। এমনিতে বাজেট কিছুটা ব্যয় সংকোচনের। কিন্তু রাজস্ব বাজেটের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে বাজেট বড় করা হয়েছে। সামরিক বাজেট থেকে শুরু করে অনেক অনুৎপাদনশীল খাতে আগের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই তুলনায় আমাদের প্রধানত কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান– এসব ক্ষেত্রে বর্ধিত বাজেট দরকার ছিল। সেখানে বরঞ্চ বাজেটের কলেবর তেমন বাড়েনি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হবে তার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই ব্যাংকিং খাত থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার নিজেই যদি এত বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়, এর কী ধরনের প্রভাব দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ওপর পড়বে?

সাইফুল হক: বাজেটের বড় জায়গা হচ্ছে, আড়াই লাখ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট। এটা পূরণ করার জন্য যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে হবে, সেটা যদি ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে হয়, তখন তাদের ওপর বর্ধিত চাপ পড়বে। তখন সরকারকে বন্ডের বিপরীতে বিপুল অঙ্কের টাকা চাপিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। আরেকটি হলো সঞ্চয়পত্রেও হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।

এই বছর সরকারকে সোয়া লাখ কোটি টাকা শুধু ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে। এটা একটা বাড়তি চাপের জায়গা। এটার বড় কারণ হচ্ছে যেসব মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানে অনেকগুলো থেকে কোনো আয় আসছে না। যেমন– রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এখনও উৎপাদনে যায়নি। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের আয় থেকে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও আসছে না। এই রকম অসংখ্য প্রকল্প আছে, যেগুলো চমক দেখানোর জন্য করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের আর্থিক কার্যক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। এইগুলো সরকারকে বর্ধিত ঋণের চাপে ফেলেছে। আর রিজার্ভের অবস্থা তো এমনিতে শোচনীয় পর্যায়ে আছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: মূল্যস্ফীতি গত দু’বছর ধরে ৯ শতাংশের ওপর। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এটি কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? এ জন্য বাজেট ঘাটতি কমানো ও কৃচ্ছসাধনের ওপর মন্ত্রী জোর দিয়েছেন? এগুলো বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা সরকারের কতটা রয়েছে? মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

সাইফুল হক : সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছে, এটা অবিশ্বাস্য। এখনই খাদ্যদ্রব্যের ওপর ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি আছে। তার লাগাম টেনে ধরা হচ্ছে– এমন কিছু এখন পর্যন্ত আমি দেখছি না। মূল্যস্ফীতি করা মানেই হচ্ছে প্রকৃত আয় কমে যাওয়া।

ধরুন যেটুকু বাজেট হয়েছে, তা কি কার্যকর হবে? সামাজিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দরিদ্র মানুষের জন্য যেটুকু বরাদ্দ আছে, তা কার্যকর করার অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতাই নেই সরকারের। কারণ, কেউ সরকারের কথা শুনছে না। সবদিকে নৈরাজ্য। সরকারের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা না থাকাই বাজেট কার্যকর করার যে সক্ষমতা, সেটা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

জুন মাসে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়, এরপর আর হয় না। কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, ব্যক্তি বাস্তবে তারাই অর্থনীতির চালিকাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ব্যাংক, শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রাখছে। এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা ও আর্থিকভাবে একটা কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো সুযোগ দেখছি না। বাংলাদেশ এখন বড় বড় ব্যবসায়ীর একটা সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান না হয়ে বড় বড় ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ ও বড় ঋণখেলাপিদের সমিতির ভূমিকা পালন করছে। সেই জায়গা থেকে এখানে আমি ভালো কোনো লক্ষণ দেখছি না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। অনেকে এ নিয়ে সমালোচনা করে বলছেন, বৈধ আয়ের ক্ষেত্রে যেখানে সর্বোচ্চ আয়কর ৩০ শতাংশ, কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটে ১৫ শতাংশ কর দিলেই যেহেতু চলবে, এটি তাই কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত করা হবে। নৈতিকতার প্রশ্নটি বাদ রেখেও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ কতটা ইতিবাচক ফল দেবে বলে আপনি মনে করেন?

সাইফুল হক: ১৫ শতাংশ কর দিলে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সরকার যে যুক্তি দিয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আপনি চুরি-ডাকাতি, মানুষ খুন করে হাজার লাখ কোটি টাকা তৈরি করছেন, ১৫ শতাংশ কর দিলে সেটা বৈধ হয়ে যাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে আপনি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চুরি, ডাকাতি বাস্তবায়নে উৎসাহ দিচ্ছেন। নৈতিক দিক থেকে এটা অবৈধ। সূচকের দিক থেকে অতীতে তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে যারা প্রকৃত কর দিচ্ছে, তাদেরকে ৩০ শতাংশ দিতে হবে। এটা তো বড় ধরনের বৈষম্য। চুরি করার ক্ষেত্রে নিন্দার বদলে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করতে পারছি না।

করোনার সময় এক-দেড় বছর বাইরে টাকা পাঠাতে পারেনি। তখন কিছু টাকা এখানে যুক্ত হয়েছিল। এরপরে দেশে কিন্তু খুব বেশি টাকা আসেনি। খুব বড় অঙ্কের কোনো টাকা সাদা হয়নি। কারণ, এরা সুযোগ পেলেই বাইরে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গাটা এখনও বিদ্যমান।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এবারের বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?

সাইফুল হক: বিনিয়োগের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। সরকারের ঋণের প্রভাব তো অবশ্যই বেসরকারি খাতে পড়বে। ব্যাংকের সামর্থ্য তো এমনিতেই দুর্বল, সরকার যখন বিশাল অঙ্কের ঋণ নিজেই নিয়ে নিচ্ছে, তখন বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা থাকছে না। সেই ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কমে যাবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক যে অস্থিরতা, এখানে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে বিনিয়োগ না হলে এখানে কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই। এখন তো হাজার হাজার শ্রমিক দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে বরঞ্চ সরকার এক ধরনের মুক্তি পাচ্ছে। লুটপাটের বাজারের মধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাবের বাজেট এটা।

ভয়েস অফ আমেরিকা: সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ এবারের বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ। এর কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে? এ খাতে খরচ কমিয়ে আনার জন্য সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়া প্রয়োজন?

সাইফুল হক: কমিয়ে আনা মানে হচ্ছে রাজস্ব সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া। এনবিআরকে শক্তিশালী করা। আরও লাখ লাখ মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা। বিশেষ করে ওপরের (ধনী) ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ তাদের ওপর বর্ধিত আকারে কর আরোপ করা। তাদের অপ্রদর্শিত আয়কে বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় অনুকূলে নেওয়া। সরকারের অপচয় কমানো। রাজস্ব ব্যয় কমানো। বিলাসদ্রব্যের আমদানি বন্ধ করা। তাদের ওপর শুল্ক বেশি আরোপ করা। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে সরকারের অনেক বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু এটা করার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সক্ষমতা নেই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: জনপ্রশাসন খাতে খরচ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা, যা শীর্ষ পাঁচ ব্যয় বরাদ্দ খাতের একটি। অথচ আমরা প্রতিবছরই দেখি বাজেট বাস্তবায়ন ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। যার জন্য জনপ্রশাসনের অদক্ষতাকে সমালোচকরা একটি প্রধান কারণ বলে মনে করে থাকেন। বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধি না করে জনপ্রশাসন খাতে এ বিপুল বরাদ্দ কতটা যৌক্তিক? বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

সাইফুল হক: আমাদের মতো দেশে অর্থনীতি যখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে তখন জনপ্রশাসনে খরচ সংকুচিত করাটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেটা না করে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে সরকার টিকে আছে জনপ্রশাসনের ওপর ভিত্তি করে। জনকল্যাণের চেয়ে বরং আমলা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা খুশি থাকলে সরকারের ক্ষমতাটা নিরাপদ। এই রকম জায়গা থেকে জনপ্রশাসনের ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর সরকারের রাজনৈতিক সক্ষমতা নেই বলে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনপ্রশাসনের চাপ থাকছে না। সরকার তো কাউকে বাধ্য করতে পারছে না। ফলে এখানে তো নজরদারি, খবরদারি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। তাই সেখানে সবাই যা পারছে, সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: করের আওতা না বাড়িয়ে যারা কর দেয় তাদের ওপরই করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে এবারের বাজেটে, বলে সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

সাইফুল হক: মধ্যবিত্তের ওপর পরোক্ষ করের চাপ সবচেয়ে বেশি। আপনি যা-ই কিনেন না কেন, আপনাকে একটা ভ্যাট দিতে হচ্ছে। বরং যারা ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুট করেছে, দুর্নীতি করেছে, এই মালয়েশিয়াতে শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে সরকারের চারজন এমপি ও তাদের পরিবার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি খাতে সরকারের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তাদের ওপর বর্ধিত কর এবং অপ্রদর্শিত আয়কে নিয়ে আসার তৎপরতা আমরা দেখছি না। কারণ, তারা সরকারের একটা অংশ।

সাধারণ মানুষ বাজেটে দেখে, প্রতিনিয়ত যে পণ্যগুলো তারা ক্রয় করে, সেটা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে কিনা। সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য বাজেটে কোনো সুখবর নেই। বরঞ্চ মধ্যবিত্তের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা এবার অনেক বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট, ট্যাক্স কার্যকর করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩ বা ৬ মাস পর বাজেট কতটুকু কার্যক্রর হয়েছে, তার পর্যালোচনা করে। আমাদের এখানে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজেট পর্যালোচনা করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে বাজেট নিয়ে আলোচনাই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয় না। কেন? এবারের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? এর তিনটি ইতিবাচক দিক বলবেন? প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন কোন দিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যা এবারের বাজেটে সেভাবে দেওয়া হয়নি।

সাইফুল হক: আমাদের এখানে প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট কখনও জনসম্মুখে আলোচনা হয় না। আমি মনে করি, সংবেদনশীল দুই-একটি ক্ষেত্র বাদে বাকি প্রতিরক্ষা বাজেট জনসম্মুখে আলোচনার বিষয়। এটাকে আলোচনা করা দরকার। প্রতিরক্ষা বাজেট এই বছরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের এখানে প্রতিরক্ষা বাজেট কিছুটা সাদা হাতি পালন করার মতো। কারণ, গত ৫৪ বছরে কারও সঙ্গে যুদ্ধ করিনি। আগামী ৫৪ বছরে এখানে কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং আমাদের এখানে গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া দরকার। পেশাদার বাহিনীর পাশাপাশি আধা সামরিক অর্থাৎ যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা।

প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো স্বচ্ছতা আছে কি? মানুষ কি সেটা জানে? এটা কোথাও আলোচনা হয় না। এটা আমি নিজেও জানি না। সংশ্লিষ্ট যে সংসদীয় কমিটি আছে, তারাও কি পুরো ব্যাপারটা জানে? এই প্রশ্ন নাগরিক হিসেবে উত্থাপনের বিষয় আছে।