আবহাওয়া: সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা, ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস

সিলেট এবং সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। ১৮ জুন, ২০২৪।

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৭ মে সিলেটে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সিলেট এবং সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিরাজ করছে তাপপ্রবাহ।

সিলেটে বন্যা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে, সিলেটের তিনটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আরো কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে করে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। রবিবার (১৬ জুন) রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন জানিয়েছিলো, সিলেট জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নগরীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী দিন যাপন করছে।

বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন (১৭ জুন) কুরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার ১৩টি উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) থেকে আবার বন্যা কবলিত হয় সিলেট।

রবিবার (১৬ জুন) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে জীবন যাপন করছে। সোমবার (১৭ জুন) ভোররাত থেকে সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে নামতে থাকে উজানের ঢল। ফলে, ১৭ জুন সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এছাড়া সিলেট মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা হয় প্লাবিত। নগরের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

সিলেট মহানগরের সব নিচু এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় কোমর পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, দরগা মহল্লা, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সব উপজেলায় মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেট মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও একই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার ‍উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও গোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায়, সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে, ভারতের আইএমডি'র তথ্যমতে মঙ্গলবার সকালে শেষ হওয়া ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বৃষ্টির পূর্বাভাস

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ।

এক বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় “সক্রিয় মৌসুমি ভারী ৪৪-৮৮ মিলিমিটার থেকে খুব ভারী ২৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।”

মৃদু তাপপ্রবাহ

অন্যদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এখনো তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, খুলনা বিভাগসহ পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকবে।

লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।