বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপন, মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত

বাংলাদেশে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হলো ঈদুল আযহা। ১৭ জুন, ২০২৪।

বাংলাদেশে সোমবার (১৭ জুন) উৎসবের আমেজে উদযাপিত হলো মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। ঈদের নামাজে দেশের অগ্রগতি এবং জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

রাজধানী ঢাকার হাইকোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির মধ্যে, সিলেটের শাহী ঈদগাহে বিভাগের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঈদ উদযাপনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে, ঢাকাসহ সারা দেশে তৎপর ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঈদ উপলক্ষে সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও আশ্রয়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

ইসলাম ধর্মমতে, অটল বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ হিসেবে নিজের ছেলে ইসমাইলকে উৎসর্গ করার ইচ্ছার প্রকাশ করেছিলেন নবী হজরত ইব্রাহিমে। সেই কথা স্মরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় প্রতি বছর ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়।

জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করেছেন রাষ্ট্রপতি

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে যোগ দিয়ে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন তার পরিবারের সসদ্য ও কর্মকর্তারা।

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ১৭ জুন, ২০২৪।

রাষ্ট্রপতি সেখানে পৌঁছালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে, এক জামাতে নামাজ আদায় করেন মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনপ্রণেতা, জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং দেশের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে এসময় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে ঈদগাহের মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি।

বড় জামাত

বড় জামাতে মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করেছেন বাংলাদেশের অনেক এলকার মুসলিমগণ। দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দান। সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে সমবেত হন প্রায় তিন লাখ মুসল্লি। সকাল সাড়ে ৮টায় মাওলানা শামসুল হক কাসেমীর নেতৃত্বে এই ঈদগাহে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মুসুল্লিদের যাতায়তের সু্বিধার্থে দুইটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে এবং অন্যটি পাবর্তীপুর থেকে দিনাজপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত চলাচল করেছে। গত ২০১৭ সাল থেকে গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ মাঠে শোলাকিয়ার মতো বড় পরিসরে ঈদ জামাতের আয়োজন হয়ে আসছে।

ঐতিহ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এবারো বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছোড়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় শুরু হয় এই মাঠের ১৯৭তম জামাত। এতে ইমামতি করেন জেলা সদর মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। নামাজ শেষে বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ভোর থেকে শত শত মুসল্লি ঈদগাহ ময়দানে আসতে শুরু করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশপথে প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়।

এছাড়া, বা‌গেরহা‌টে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগুম্বজ মসজিদে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় এই মসজিদে জেলার প্রধান ও প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে সকাল ৮টায় দ্বিতীয় এবং সাড়ে ৮টায় তৃতীয় ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে ভোর থেকেই জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদ উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর ঐতিহ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের গজনভী রোডের শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পরিবারকে ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানের শুরুতে, উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ বক্তব্য রাখেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ফল ও মিষ্টি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার।

নিরানন্দ সুনামগঞ্জ

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কে হাঁটু পানি। অনেকের বাসা-বাড়ি ও দোকানে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরের বিভিন্ন ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিন্মাঞ্চল। এদিকে প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ পেতে বিলম্ব হচ্ছে। তারা সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করেছেন।

সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। ১৭ জুন, ২০২৪।

মুজিবুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, “ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উঠানে ও সড়কে পানি উঠেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কেই পানি। বৃষ্টিতে ভিজে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এর আগে কোনো ঈদে এভাবে বৃষ্টি হতে দেখিনি। এবার ঈদে কোনো আনন্দ নেই।”

নুরুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেছেন, “যে পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে! সুনামগঞ্জে নদী, হাওর-বাওর, খাল-বিল, পুকুর সব পানির নিচে। ঈদের আনন্দ সব মাটি হয়ে গেছে।”

সুনামগঞ্জ শহরের রাস্তায় সুরমা নদীর পানি উঠে গেছে। আলিমাবাগ উকিলপাড়া রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, বৃষ্টি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। ছোট পরিসরে স্বল্প মেয়াদি বন্যা হতে পারে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজিব আহমদ জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোনো কোনো এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।