রবিবার রাশিয়ার দুই বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে কোনো শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের "ভৌগলিক অখণ্ডতাকে" ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ৮০ টি দেশ আহ্বান জানায়। যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ সুইস সম্মেলনে যোগ দেয়নি এবং কূটনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার পথ এখনও অস্পষ্ট।
সুইজারল্যান্ডের বার্গেনস্টক অবকাশ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এই সম্মেলন একটি যৌথ ঘোষণা দিয়ে শেষ হয়। এ সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল রাশিয়ার অনুপস্থিতি, যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনেক অংশগ্রহণকারী আশা ব্যক্ত করেন যে রাশিয়া ভবিষ্যতে কোনও এক সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটিতে যোগ দিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে এই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে, শস্য ও সারের মতো পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের ফলে পশ্চিম দেশগুলোর সাথে রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য কিছু দেশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধের কারণে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এই সম্মেলনে প্রায় ১০০টি প্রতিনিধি দল যার বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশও উপস্থিত ছিল। এই সম্মেলনকে শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যখন যুদ্ধরত দেশগুলি আপাতদৃষ্টিতে আগের মতোই দূরত্বে অবস্থান করছে৷
ভারত, মেক্সিকো, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন দেশগুলির মধ্যে ছিল যারা চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেনি। সম্মেলনটিতে এ সকল দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা নিম্ন পর্যায়ের দূতরা প্রতিনিধিত্ব করে। চূড়ান্ত চুক্তিপত্রটি পারমাণবিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বন্দী বিনিময়ের মতন বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সম্মেলনে “পর্যবেক্ষক” হিসেবে আসা ব্রাজিলও স্বাক্ষর করেনি কিন্তু তুরস্ক করেছে।
চড়ান্ত চুক্তিপত্রটিতে বলা হয়েছে জাতিসংঘের সনদ এবং “ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা … ইউক্রেনে একটি সার্বিক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি অর্জনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে এবং করবে।”
পুতিনের এ ধরণের চুক্তির করার কোনও সম্ভাবনা নেই। তারা চায় ইউক্রেন যেন আরও বেশি অঞ্চল ছেড়ে দেয় এবং নেটো সামরিক জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আশা থেকে দূরে সরে আসে।
সুইস এবং ইউক্রেনের মিত্রদের সামনে এখন কাজ হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে গতি বজায় রাখা। যদিও এই শান্তি শীঘ্রই বোমা হামলা এবং রণাঙ্গনের খবরে চাপা পরে যেতে পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রণাঙ্গনে তৎপরতার মধ্যে ছিল উত্তর এবং পূর্বে রাশিয়ার কিছু আঞ্চলিক সাফল্য।
সুইস প্রেসিডেন্ট ভিওলা অ্যামহার্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অংশগ্রহণকারীদের “সংখ্যাগরিষ্ঠ” চূড়ান্ত ঘোষণায় সমর্থন দিয়েছে, যেটা “দেখিয়েছে কূটনীতি কী অর্জন করতে পারে।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগনাজিও ক্যাসিস বলেন সুইজারল্যান্ড রুশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবে, কিন্তু তিনি বলেন নি তাদের কী বার্তা দেয়া হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি সম্মেলনকে “শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “যারা জাতিসংঘ চার্টারকে সম্মান করে, তাদের জন্য চূড়ান্ত ঘোষণা গ্রহণ করার পথ খোলা থাকবে।”
উন্নয়নশীল বিশ্বের অনীহা
জাতিসংঘের সদস্যদের অর্ধেকেরও কম দেশ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে, যা থেকে বোঝা যায় যুদ্ধ নিয়ে ক্লান্তি এবং অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্ব কী ধরনের প্রভাব রেখেছে। অথচ, ২০২২ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার নিন্দা করে এবং মস্কোর সেনা বাহিনীকে ইউক্রেন ছাড়ার আহবান জানিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ১৪১ দেশ ভোট দিয়েছিল।
সম্মেলনে উপস্থিত কিছু উন্নয়নশীল দেশ কেন চূড়ান্ত ঘোষণা সমর্থন করে নি, তা পরিষ্কার নয়। সম্ভম্বত তারা রাশিয়াকে বিব্রত করতে দ্বিধান্বিত। অথবা তারা একদিকে রাশিয়া এবং তার মিত্র চীন, আর অন্যদিকে ইউক্রেনের সমর্থক পশ্চিমা শক্তিগুলোর মাঝখানে একটি জায়গা সৃষ্টি করে নিয়েছে।
সুইস সম্মেলনের চ্যালেঞ্জ ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত কথা বলা, কিন্তু একই সময় মস্কো যাতে শান্তি উদ্যোগে অংশ নিতে পারে, তার সুযোগ সৃষ্টি করা।
বিশ্লেষকরা সন্দেহ করছে, দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলন যুদ্ধ থামাতে খুব কম কার্যকর ভূমিকা রাখবে, কারণ রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। চীন, যারা সম্মেলনে আসে নি, এবং ব্রাজিল যৌথভাবে শান্তির জন্য বিকল্প পথ খুঁজছে।