ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর সুবিধার্থে দিনের বেলা যুদ্ধ বন্ধ রাখবে

গাজার বিধ্বস্ত খান ইউনিসে দুই ফিলিস্তিনি শিশু ঈদের নামাজে অংশ নেয়ার জন্য হেঁটে যাচ্ছে। ফটোঃ ১৬ জুন, ২০২৪।

নয় মাস-ব্যাপী যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটে মরিয়া হয়ে ওঠা ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্ধারিত মানবিক ত্রাণ সরবরাহের প্রবাহ বাড়াতে, দক্ষিণ গাজার একটি সরবরাহ পথে দিনের বেলা লড়াই বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনী রবিবার এই ঘোষণা দেয়।

এই "কৌশলগত বিরতি", রাফার প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তায় প্রযোজ্য হবে। তবে এই ‘বিরতি’ ইসরায়েলের শীর্ষ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবি করা যুদ্ধবিরতি থেকে অনেক কম। তবে যদি যুদ্ধে এই সীমিত স্থগিতাদেশ বহাল থাকে, তবে ফিলিস্তিনিদের অতিপ্রয়োজনীয় কিছু চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই এই কর্মবিরতি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

ত্রানবাহী ট্রাকগুলোকে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালোম ক্রসিং-এ পোঁছে উত্তর-দক্ষিণের প্রধান সড়ক সালাহ আ-দ্বীন মহাসড়কে নিরাপদে যাতায়াতের সুযোগ দেবার জন্য এই সাময়িক বিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।

মে মাসের শুরুর দিকে রাফায় ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর আক্রমণের পর থেকে এই ক্রসিং দিয়ে যানবাহন চলাচল আটকে যায়।

গাজায় ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা সিওজিএটি বলেছে, এই রুটটি খান ইউনিস, মুওয়াসি এবং মধ্য গাজাসহ গাজার অন্যান্য অংশে ত্রাণ প্রবাহ বাড়িয়ে তুলবে। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজাতে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে অন্য একটি ক্রসিং দিয়ে।

গাজার খান ইউনিসে ঈদের আগে ফিলিস্তিনিরা খাবার সংগ্রহ করছে। ফটোঃ ১৫ জুন, ২০২৪।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর রবিবার থেকে এই বিরতি শুরু হয়। সারা বিশ্বে মুসলমানেরা এসময় ঈদুল আজহার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা সমালোচনা করার পর সামরিক বাহিনী বলেছে, দক্ষিণ গাজার বাকি অংশে লড়াই থামানো হবে না। গাজায় সার্বিকভাবে ত্রাণ প্রবেশের ক্ষেত্রেও কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।

জাতিসংঘ 'আশাবাদী'

জাতিসংঘসহ ত্রাণ সংস্থাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার গাজা বিষয়ক পরিচালক স্কট অ্যান্ডারসন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএনকে বলেছেন তিনি আশাবাদী যে, এই বিরতি "জনগণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে আসবে।”

ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাব বিবেচনা করার পর্যায়ে এই বিরতির ঘোষনা আসে। যুদ্ধ বন্ধ এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে অপহৃত জিম্মিদের মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর প্রশাসন সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলাচ্ছে।

বাইডেন এটিকে ইসরায়েলি প্রস্তাব হিসেবে বর্ণনা করলেও ইসরায়েল তা পুরোপুরি গ্রহণ করেনি। হামাস এই পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন দাবী করেছে যেগুলো ইসরায়েলের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।

যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, এবং রবিবার ইসরায়েল গাজায় সম্প্রতি নিহত ১১জন সৈন্যের নাম প্রকাশ করেছে। গত বছর থেকে গাজায় ইসরায়েল স্থল আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত সেনার সংখ্যা ৩০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, গত ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস ১২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করেছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বনালো, এই যুদ্ধে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আট মাসের সামরিক অভিযানে, গাজা বড় ধরনের মানবিক সংকটে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংকট নিরসনে ইসরায়েলকে আরও বেশি পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানিয়েছে।

ওসিএইচএ নামে পরিচিত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘ প্রতিদিন গড়ে ৬৮ ট্রাক ত্রাণ পেয়েছে। প্রতিদিনের চাহিদা ৫০০ ট্রাকের তুলনায় সংখ্যা অনেক কম। গত এপ্রিলে তা ছিল দৈনিক ১৬৮ ট্রাক, যা গাজার ১০ লাখ বাসুচ্যুত ফিলিস্থিনিদের জন্য অপ্রতুল।