সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় ঈদ উদযাপন, মূল উদযাপন সোমবার

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে। ১৬ জুন, ২০২৪।

বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে সোমবার (১৭ জুন)। দেশব্যাপী ঈদ উদযাপানের একদিন আগে, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে, রবিবার (১৬ জুন) বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, “ঈদ সকলের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদুল আযহার শিক্ষা ধারণ করে, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

অন্যদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঈদের দিন বাংলাদেশের ৮ বিভাগের সব জায়গায়, অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মত্যাগ ও আত্মদানের মানসিকতা সঞ্চারিত করে; আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।”

কেউ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে সমাজের দারিদ্রপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে, সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহার ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে, সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার (১৬ জুন) এক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “ঈদুল আযহার শিক্ষা ধারণ করে আসুন আমরা ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করি।”

পবিত্র ঈদুল আযহার গুরুত্ব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পবিত্র ঈদুল আযহা আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, সুখ, শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন। ঈদ মোবারক।”

ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে

রবিবার (১৬ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮ বিভাগের সব জায়গায়, অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি স্থানে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এছাড়া, রাজশাহী, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইতে থাকবে। উত্তরাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং অন্য সব জায়গায় প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়া বার্তায় আরো বলা হয়, রাতের তাপমাত্রা দেশজুড়ে একইরকম থাকবে। আর, এ সময় বাতাসে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।

এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ বিরাজ করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থানে রয়েছে; আরো জানায় আবহাওয়া বিভাগ।

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে, বাংলাদেশের বরিশাল, চাঁদপুর, লালমনিরহাট ও ঝিনাইদহ সহ বেশ কিছু জেলায় উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল আযহা। সোমবার (১৭ জুন) দেশব্যাপী ঈদ উদযাপন হবে। এর একদিন আগে, রবিবার (১৬ জুন) এসব জেলায় ঈদ উদযাপন করা হয়।

বরিশালে পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার রবিবার ঈদ উদযাপন করেছে। জেলার প্রায় অর্ধশত মসজি‌দে সকালে জামাত অনু‌ষ্ঠিত হয়। এরপর পশু কোরবানি দেয়া হয়।

নগরীর সাগরদীর তাজকাঠী মিয়াবাড়ী এলাকার জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত নামাজে অংশ নেন কয়েকশ মুসল্লি।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার রবিবার ঈদ উদযাপন করছে।

একইভাবে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে চন্দনাইশ দরবারের অনুসারীরা রবিবার ঈদ উদযাপন করে। এছাড়া বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ৫-৬টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার রবিবার ঈদ উদযাপন করেছে।

জেলার মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামে আড়াই ২ হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করেছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালনকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই চট্টগ্রামের চন্দনাইশ জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিল রেখে তারা রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করেন।

অন্যদিকে, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরীফ সহ জেলার কমপক্ষে ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হয়।রবিবার সকাল ৯টায় সাদ্রা দরবার শরীফ সংলগ্ন হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মাঠে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীরজাদা আরিফুল্লা মিশকাত চৌধুরী।

পীরজাদা আরিফুল্লা মিশকাত চৌধুরী বলেন, ১৯২৮ সাল থেকে তারা মুসলিম বিশ্বের সাথে, ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং পবিত্র রমজানের রোজা রেখে আসছেন।

দরবার শরীফে ঈদের নামাজ পড়তে আসা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও আ. হামিদ জানান, মরহুম পীর সাহেবের সময়কাল থেকে এই নিয়মে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছেন তারা। বলেন, “আমরা মনে করি, শনিবার(১৫ জুন) সৌদি আরবে হজ পালন হয়েছে। আজ (১৬ জুন) তারা ঈদ উদযাপন করেছে, আমরাও তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছি। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।”

একই সঙ্গে জেলার আরো কিছু গ্রামে এই মতের অনুসারী ব্যক্তিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন ও কোরবানি করছেন।

এছাড়া, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অর্ধশত পরিবার রবিবার (১৬ জুন) ঈদ উদযাপন করে। সকাল ৯টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর উত্তর বালাপাড়া পানি খাওয়া ঘাট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আতিকুর রহমান।

প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার, সুন্দ্রহবী, চন্দ্রপুর ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের সদস্যরা ঈদ উদযাপন করেন।

মাওলানা আতিকুর রহমান বলেন, হাদিসের আলোকে অনেক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চন্দ্রপুর উত্তর বালাপাড়া পানি খাওয়ার ঘাট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ জামাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশত মুসল্লি অংশ নেন।

উত্তর বালাপাড়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে-কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দরসহ ৬টি উপজেলায় প্রায় ২ হাজার পরিবার রবিবার ঈদ উদযাপন করে।সকাল ৮টায় জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ঈদের নামাজে অংশ নেন শতাধিক পরিবারের সদস্য। এতে ইমামতি করেন বিরলের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।

জেলার চিরিরবন্দরের সাইতাড়া রাবার ড্যাম, ফতেজংপুর, কাহারোলের জয়নন্দ ১৩ মাইল গড়েয়া, বিরলের বনগাঁও জামে মসজিদে এবং বিরামপুরের বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা বাজার জামে মসজিদ ও জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর জামে মসজিদসহ কয়েকটি স্থানেও ঈদের নামাজ আদায় করা হয় রবিবার।

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে, ২০০৭ সাল থেকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন দিনাজপুরের এসব মানুষ।